প্রতিদিন আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

আমলকি ঃ আমলকিকে সাধারণত আয়ুর্বেদিক ঔষধ বলা হয়ে থাকে। কারণ আমলা বা আমলকি হচ্ছে আয়ুর্বেদিক একটি উপাদান। এটা খাদ্য ও ঔষধ উভয়ই। এই ছোট্ট ফুলটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।’আমলকি সাধারণত একটি টক জাতীয় ফল। আসলে আমলকি ভেষজ ঔষধ হিসেবে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যেটি বিনামূল্যে র‍্যাডিকেল থেকে আমাদের শরীরের সেল অক্সিডেশন প্রতিরোধ করে দেয় খুব সহজেই। 

ডায়াবেটিস, হৃদরোগের এবং ক্যান্সারের মতো রোগ প্রতিরোধে করার ক্ষেত্রে এটি খুবই কার্যকর। আমলকি সাধারণত গ্রাম অঞ্চলে বেশি পাওয়া যায়। প্রতিদিন নিয়মমাফিক আমলকি খেলে অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং জটিলতম কোন রোগ হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। এটি অনেক রোগের জন্য চিকিৎসা প্রদান করে এবং এই কারণে এটা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। 

আমলা বা আমলকিতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লোহা, ক্যারোটিন এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। প্রতিদিন আমলকি খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় সেইসাথে আমাদের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। 

 

আমলকির পুষ্টিগুণ

আমলকির অনেক ভেষজ গুণ রয়েছে বলেই একে ভেষজ জাতীয় উদ্ভিদ বলা হয়। অনেক আগে থেকেই আমলকি গাছের ফল ও পাতা দুটিই ওষুধরূপে ব্যবহার করা যায়। আমলকিতে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। আমলকিতে এত পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে যে পেয়ারার চেয়ে ৩ গুণ বেশি ও কাগজি লেবুর চেয়ে ১০ গুণ বেশি, কমলার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি, আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ বেশি, আমের চেয়ে ২৪ গুণ এবং কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি। আপনারা জেনে থাকবেন একজন পুর্ণ বয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ দরকার। কেউ যদি দিনে ২টি আমলকি খায় তাহলে সে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’খুব সহজেই পেয়ে যাবে। আমলকি খাওয়ার ফলে মুখের রুচি বৃদ্ধি পায়।

 

আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

আমলকি হচ্ছে সেরা ভেষজের মধ্যে একটি। এটি আপনি নিয়মমাফিক প্রতিদিন খেতে পারেন এবং এতে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। বরং রয়েছে অনেক উপকার।

১) আমলকি আমাদের মাথার চুলে টনিক হিসেবে কাজ করে থাকে আমাদের চুলের পরিচর্যার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আমলকি কেবল চুলের গোড়া মজবুত করে তা নয়, এটি চুলের বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে।

২) আমলকি চুলের খুশকি সমস্যা দূর করতে অনেক সহায়ক এবং এটি পাকা চুল প্রতিরোধ করে। 

৩) আমলকি অর্ধেক চূর্ণ শুষ্ক ফল ১ গ্লাস পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে তারপর সেই পানি পান করলে হজম জনিত সমস্যা খুব সহজেই দূর হয়। খাবারের সঙ্গে আমলকীর আচার মিশিয়ে খাওয়ার ফলে হজম করতে সহায়তা করে।

৪) আমলকির রসের সাথে মধু মিশিয়ে খাওয়ার মাঝে রয়েছে অনেক উপকারিতা। প্রতিদিন সকালে আমলকির রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। যার ফলে ত্বকের কালো দাগ দূর হবে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।

৫)  আমলকির রস দৃষ্টি শক্তি এবং চোখের জ্যোতি বাড়াতে অনেক সাহায্য করে। তাছাড়া চোখের বিভিন্ন সমস্যা যেমন চোখের প্রদাহ। চোখ চুলকানি বা পানি পড়ার সমস্যা থেকে তাৎক্ষণিক রেহাই দেয়।

৬) নিয়মিত আমলকি খাওয়ার ফলে চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি পায়। এতে রয়েছে ফাইটো-কেমিক্যাল যা চোখের সঙ্গে জড়িও ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

 

প্রতিদিন কয়টা আমলকি খাওয়া উচিত

আমলকির ভালো গুনাগুন পেতে এর সঠিক ব্যবহার করতে হবে, সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে এটি অনেক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই দিনে কয়টা আমলকি খাওয়া উচিত কতটুক পরিমানে আমলকি খাওয়া যাবে বা আমলকির পাউডার খাওয়া যাবে ইত্যাদি জানবো। আমাদের নিয়মিত কয়টা আমলকি খাওয়া উচিত তা আমরা বিস্তারিত ভাবে জেনে তারপর খাব।

 

আপনি সারাদিনের ২ থেকে ৩ টি আমলকি কাঁচা খেতে পারেন। আপনারা এটা ফল হিসেবে খেতে পারেন অথবা এর জুস করে এর সঙ্গে এক চামচ মধু এবং এক চিনতে লবণ মিশিয়ে পান করতে পারেন। এতে অনেক উপকার পাওয়া যায়। আমলকির জুস করে খেলে যে সকল উপকার হয়, হাতে-পায়ের জ্বালাপোড়া, চোখ জ্বালাপোড়া, পেটের জ্বালাপোড়া ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় অতি সহজেই।

 

সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর হালকা একটু নাস্তা করে, ২ ঘন্টা পর অথবা সাড়ে এগারোটা বারোটার দিকে এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সঙ্গে আমলকির গুড়া মিশিয়ে এর সঙ্গে এক চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে পান করতে পারেন। এভাবে পান করলেও ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এর জন্যই আপনারা প্রতিদিন যেকোন একটি উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে আমলকি খাবেন। এতে আপনাদের শরীর ও স্বাস্থ্য দুইটাই ভালো থাকবে। 

 

সতর্কতা

  • সার্জারি রোগীদের আমলকি খাওয়া উচিত নয়। সার্জারির রোগীরা আমলকি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এ ছাড়াও ব্লাড থিনিংয়ের ওষুধ খেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে আমলকি খেতে হবে।
  • স্তন্যদানকারী মায়েরাও আমলকি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যদিও খেতে চান তাহলে সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • হার্টের জন্য আমলকি খাওয়া ক্ষতিকর নয়। তবে আপনি যদি অতিরিক্ত খান তাহলে সেটা ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, হৃদরোগের সমস্যা থাকলে ফলটি খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • আমলকি কিন্তু একটি এলার্জিজনিত রোগ। অনেকের আমলকির প্রভাবে অ্যালার্জিও হতে পারে। এ ছাড়াও বমি বমি ভাব, পাকস্থলীতে কৃমি, ডায়রিয়া, পেটের ব্যথা হওয়ারও আশঙ্কা থাকে।

শেষকথা

প্রতিদিন সঠিক নিয়মে আমলকি খাওয়ার ফলে হতে পারে আপনার নানান ধরনের শারীরিক সমস্যা সমাধান। আশা করি আজকের আলোচনার মাধ্যমে আপনারা আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। নিয়মিত আমলকি খাওয়ার অভ্যাস করুন। শরীরকে সুস্থ রাখুন।

 

 

আর ও পড়ুনঃ
সোনাপাতা খাওয়ার নিয়ামবলি 
ভেষজ মেডিসিন কেনার ভাল শপ 

Share this post

Facebook
Twitter
LinkedIn
Pinterest
Telegram
Tumblr

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Our Newsletter

Get updates and learn from the best

More To Explore

Popular posts