বাচ্চাদের বুদ্ধিমান ও মেধাবী বানানোর উপায়

বাচ্চাদের বুদ্ধিমান: আপনার শিশুর বুদ্ধির বিকাশ–শিশুর মেধা ও বুদ্ধি বাড়ানোর উপায়: আমরা অনেকেই ভেবে থাকি, শিশুদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে অটোমেটিক তাদের বুদ্ধির বিকাশ ঘটে। এতে বেশি কিছু করার নেই। কিন্তু এই ধারণাটি একেবারেই ভুল। শিশুদের বুদ্ধি অর্থাৎ মেধা বাড়ানোর নানা কৌশল আছে। যা সময় মত প্রয়োগ করে শিশুর মেধা বাড়ানো যায়।

 

শিশু জন্মের সময়, আপনার শিশুর মস্তিষ্কে ১০০ বিলিয়ন নিউরন বা তার থেকে বেশিও থাকে (মিল্কিওয়েতে যতগুলি তারা রয়েছে!) আর প্রথম বছরেই সে কোটি কোটি ব্রেন-সেল সংযোগ স্থাপন করে, যাকে নিউরাল সিনাপেস বলা হয়।

 

আপনি যে সময় শিশুর সাথে হাসিমাখা মুখে ভালোবাসার সহিত কথা বলেন, তখন তার মস্তিষ্কের নিউরাল সিনাপেস এবং পথগুলিকে একসাথে শক্তিশালী হওয়ার আরও বেশি সুযোগ করে দিচ্ছেন। এর ফলে, ঐ শিশুটি সহজে ভাষা শিক্ষা, যুক্তি এবং পরিকল্পনা দক্ষতা অর্জন করে। তাই শিশুর বুদ্ধির বিকাশে আপনাকে বাহ্যিক ও সহায়ক ভূমিকা পালন করা উচিত।

 

বাচ্চাদের বুদ্ধিমান ও মেধাবী বানানোর কয়েকটি উপায়

সন্তান বুদ্ধিমান ও মেধাবী হবে- ঘরের পরিবেশ আপনার সন্তানকে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে সাহায্য করে।

 

১) বাবা-মা হিসেবে নিজের দায়িত্ব বুঝুন

কোন কোন নতুন পরিবর্তন আনা যায় তা ভেবে বের করুন। সন্তান স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে সঠিকভাবে যোগাযোগ করতে পারছে কিনা, সেই দিকে খেয়াল রাখুন।

২) রুটিন মেনে চলতে শেখান 

আপনার সন্তানকে পরিকল্পনা করতে শেখান। সময়ের কাজ সময়ে করতে রুটিন তৈরি করুন ও তা মেনে চলতে শেখান। বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করানোটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৩) পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো রাখুন ঘরে 

স্কুলের বাড়ির কাজে শিশুদের অনেক সময় ব্যবহার করতে হয় গ্রাফ পেপার।

৪) মাঝে মাঝে বদলে যাক পড়ার স্থান 

সন্তানের পড়ার ঘরে থাকুক পর্যাপ্ত আলো-বাতাস। ঘরের দেয়ালের রং যেন গাঢ় না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। 

৫) পড়ার টেবিল হোক আরামদায়ক ও বুক শেলফ রাখুন 

পড়ার ঘরে পর্যাপ্ত পরিমাণ খালি স্থান রাখুন। সেখানে যেন থাকে সন্তানের পছন্দের খেলনা।

৬) মাঝে মাঝে দিন ব্রেক 

সবসময় পড়ার কথা বলবেন না সন্তানদের। হালকা বিশ্রামের জন্য তাদের বন্ধুদের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে দিন।

৭) পড়ার টেবিল থাকুক গোছানো ও শান্ত

বিশেষজ্ঞরা জানান, পড়ার আলাদা টেবিল ছাড়াও ডাইনিং টেবিল, কিচেন কাউন্টার এবং ঘরে যদি আপনার ছোট্ট কাজের জায়গা থাকে তবে সেখানেও সন্তানরা পড়তে পারবে।

৮) কাজের তালিকা তৈরি 

বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানগুলো মনে রাখার জন্য সন্তানের ঘরের পড়ার টেবিলের সামনে রাখুন হোয়াইট বোর্ড। 

 

শিশু ঠিকঠাক  ভাবে বে বাড়ছে কিনা খেয়াল রাখুন 

আমার বাচ্চাটা বোধহয় ঠিকঠাক বাড়ছে না’, এমন কথা অনেক মা-বাবাই করে থাকেন। শিশুর বৃদ্ধির নিজস্ব গতি রয়েছে। আর এটাও মেনে নিতে হবে, সবাই সমান লম্বা হবে না। একইভাবে সব শিশুর স্বাস্থ্যও এক রকম হবে না। পরিবারের অন্যদের উচ্চতা কম হলে শিশুর উচ্চতাও কম হতে পারে। হরমোনজনিত সমস্যা থাকলে বা শিশু কোনো দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগলে, তার প্রভাবও উচ্চতায় পড়ে।

 

কিন্তু ঋতুমতী হয়ে যাওয়ার পর মেয়েদের উচ্চতা আর খুব একটা বাড়ে না। ছেলেদের উচ্চতা অবশ্য ১৮ পর্যন্ত বাড়ার সুযোগ থাকে। বৃদ্ধি ও বিকাশ নিয়ে কোনো দ্বিধা হলে শিশুবিশেষজ্ঞের পরামর্শে থাকা ভালো। অহেতুক ভয় থাকলে সেটাও কেটে যাবে।

 

শিশুর মনের বিকাশ

শিশুর উপর আদর, স্পর্শ শিশুর ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। জন্মের পর থেকেই শুরু হয় বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ। ধাপে ধাপে একটি শিশুর বিকাশ হতে থাকে। তাই যেকোনো বয়সী শিশুর প্রতিই মনোযোগী থাকতে হবে, তাকে সময় দিতে হবে, তার মতামতের গুরুত্ব দিতে হবে, পারিবারিক শান্তি বজায় রাখতে হবে।

 

বাচ্চাদের সুষম পুষ্টি  

শিশুর বুদ্ধি ও বিকাশ-দুটির জন্যই পুষ্টি চাই ঠিকঠাক। বিশেষত তিন থেকে সাত বছর বয়সী শিশুর নিজের প্রতি কেজি ওজনের জন্য দেড় গ্রাম করে আমিষ খেতেই হবে রোজ। অর্থাৎ ১২ কেজি ওজনের এই বয়সী শিশুর চাই ২০ গ্রাম আমিষ জাতীয় খাবার।

 

উচ্চ বুদ্ধি সম্পন্ন শিশুদের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of highly intelligent children)

প্রত্যেক উন্নত বুদ্ধিসম্পন্ন শিশু এক ধরনের বৈশিষ্টের অধিকারী নয়, তবুও কতগুলো সাধারন বৈশিষ্ট্য আপাততভাবে তাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়-

১) এদের ছোটবেলায় দৈহিক বিকাশ খুব দ্রুত হয়। এরা অপেক্ষাকৃত কম বয়সে হাটতে শেখে।

২) এদের ভাষার বিকাশও দ্রুত হয়। প্রায় দুইবছর বয়সের মধ্যে অনেক কথায় এরা পরিষ্কারভাবে বলতে পারে।

৩) কৌতুহল প্রবৃত্তি বেশি থাকায় এরা সব জিনিস সম্পর্কে প্রশ্ন করে। এদের জানার আগ্রহ বিশেষভাবে বস্তুর সামগ্রিক দিকের উপর হয়। কোন বিষয়ে অস্পষ্ট ধারনা নিয়ে এরা সন্তুষ্ট থাকতে পারেনা।

৪) অনেক কম বয়স থেকেই এরা বাড়ির বিভিন্ন কাজেও খুব বেশি পরিমানে আগ্রহ দেখায় এবং বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব দিলে খুসি হয়।

৫) এরা দ্রুত পড়তে ও গননা করতে শিখে। অনুকরনের দ্বারা এরা খুব সহজে লিখতেও পারে।

৬) এদের রসবোধ (Sense of humour) খব বেশি থাকে এবং খুব সুক্ষভাবে তারা তাদের এই রসবোধকে প্রকাশ করতে পারে। 

৭) বিভিন্ন পরীক্ষা থেকে দেখা গেছে যে, এরা সারাজীবন ধরে তাদের বুদ্ধির উন্নত মান বজায় রাখে।

৮) বিদ্যালয়ে লক্ষ্য করা যায় সম্স্ত রকম বিষয়ে এদের বোধগম্যতা বেশি।

৯) এদের মনোযোগের পরিসর বিস্তৃত হয় এবং মনোযোগের স্থায়িত্বও বেশি হয়।

১০) অনেক সময় এরা এদের চেয়ে বেশি বয়সের ছেলেমেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব করে, কারন সম বয়সীদের মধ্যে তাদের মানসিক ক্ষমতা সম্পন্ন ছেলে তারা সব সময় খুজে পায় না।

 

শিশুর ওজন ও উচ্চতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে করণীয় (In case of increase in weight and height of the child) 

মা-বাবা ও কেয়ারগিভার যিনি, তাকে বেশ কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, যেমন- জন্মের পর যত দ্রুত সম্ভব শিশুকে শাল দুধ বা কোলোস্ট্রাম দেওয়া, ৬ মাস পর্যন্ত অর্থাৎ ১৮০ দিন এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিং, ১৮১ দিনে পৌঁছালে কমপ্লিমেন্টারি ফিডিং তাকে সঠিকভাবে দেওয়া হচ্ছে কিনা। সেই সঙ্গে খেয়াল রাখা জরুরি খাবারটির ফ্রিকোয়েন্সি, এমাউন্ট, টেক্সচার যেন সঠিক হয়, ডাইভারসিফাইড হয়। 

 

যথেষ্ট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন এবং অ্যাকটিভ রেসপন্স বা সক্রিয়ভাবে শিশুকে খাওয়ানোর বিষয়টিও সমানভাবে প্রয়োজনীয়। শিশুর ক্ষেত্রে স্বাভাবিক বুদ্ধি ব্যাহত, ঘনঘন রোগাক্রান্ত হওয়া, প্রয়োজনমতো ভিটামিন ‘এ’ সাপ্লিমেন্ট দেওয়া এবং কৃমিতে আক্রান্ত হলে কৃমিনাশক দেওয়া সেসব বিষয়ে ও যথেষ্ট সচেতনতা জরুরি। 

 

শিশু কোনো কারণে অসুস্থ হলে ওজন কমতে পারে, কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে সে ঘনঘন অসুস্থ হচ্ছে কিনা, শিশুর যদি ওজন হ্রাস পায় অথবা স্থির থাকে তবে বুঝতে হবে শিশুর পুষ্টি সরবরাহ যথার্থ হচ্ছে না। এমন হতে থাকলে অবশ্যই আপনার নিকটবর্তী একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে পারেন।

 

শেষ কথা

একটি শিশুর জন্ম হলে, ওই পরিবারের সামগ্রিক জীবনধারাতেই আসে নানা অদলবদল। একদিকে তা বইয়ে দেয় আনন্দের ফল্গুধারা, অন্যদিকে বাড়িয়ে দেয় দায়িত্ব। ধাপে ধাপে বড় হয় শিশু। শিশুর বৃদ্ধি কতটা হবে, অনেকগুলো বিষয়ের ওপর তা নির্ভর করে। আমিষ, ভিটামিন ও জিংকের মতো পুষ্টি উপাদান যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি দরকারি শরীরচর্চা। না, না আটঘাট বেঁধে শিশুকে ব্যায়াম শেখাতে হবে না।

 

শিশুর স্বাভাবিক উচ্ছল জীবনের হুটোপুটি, ছোটাছুটির কথাই বলা হচ্ছে। বয়স অনুযায়ী শিশুর স্বাভাবিক শারীরিক কার্যক্রমই শিশুর জন্য শরীরচর্চা। এই যেমন সাইকেল চালানো ও ঝুলে থাকার মতো কাজ শিশুর বৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।

 

 

আরো পড়ূনঃ
প্রতিদিন কেন সাইকেল চালাবেন 
শিশুদের জন্য সেরা খেলনা 

Share this post

Facebook
Twitter
LinkedIn
Pinterest
Telegram
Tumblr

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Our Newsletter

Get updates and learn from the best

More To Explore

Popular posts