বিড়ালের রোগ ও উপসর্গঃ বিড়াল বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় পোষা প্রাণীগুলির মধ্যে একটি, লক্ষ লক্ষ পরিবার তাদের পরিবারের সদস্য হিসাবে দত্তক নিতে পছন্দ করে। যদিও বিড়ালগুলি দুর্দান্ত সঙ্গী করতে পারে, একটি বাড়িতে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একটির মালিক হওয়ার সুবিধা এবং অসুবিধা উভয়ই বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। এই নিবন্ধে, আমরা একটি বিড়ালের মালিক হওয়ার কিছু সুবিধা এবং অসুবিধাগুলি অন্বেষণ করব, যার মধ্যে রয়েছে তাদের কম রক্ষণাবেক্ষণ, স্বতন্ত্র প্রকৃতি এবং সম্ভাব্য স্বাস্থ্য সুবিধার পাশাপাশি তাদের অ্যালার্জি, আসবাবপত্র স্ক্র্যাচ এবং একটি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার সম্ভাবনা। বিড়ালের মালিকানার সুবিধা এবং অসুবিধাগুলি বোঝা আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে যে একজন বিড়াল সঙ্গী আপনার এবং আপনার পরিবারের জন্য সঠিক পছন্দ কিনা।
বিড়ালের চিকিৎসা
বিড়ালের অসুখ হলে আমাদের সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ডাক্তারের পরামর্শর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও ওষুধ দিয়ে বিড়ালকে খুব তাড়াতাড়ি ভালো করে তোরা সম্ভব।
বিড়ালের রোগ ও উপসর্গ
হিপ ডিসপ্লেসিয়া
এটিও জিনগত রোগ। দ্রুত লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তবে অস্ত্রোপচারে এ রোগ নিরাময় করা সম্ভব।
পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ
রোগটি পার্সিয়ান ক্যাটের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এটি জিনগত যা কিডনিতে সংক্রমিত হয়। প্রথম দিকে ধরা পড়লে পরে আর ধরা পড়ে না। এ রোগের চিকিৎসা নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে।
ফেডিং কিটেন সিনড্রোম
সদ্যোজাত থেকে কয়েক সপ্তাহ বয়সী বিড়ালের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। রোগটি মা বিড়ালের স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে।
ওয়ার্ম
নানা ধরনের অণুজীবে আক্রান্ত হতে পারে বিড়াল। এর মধ্যে পোষা বিড়ালের বড় সমস্যা হলো হার্টওয়ার্ম। আক্রান্ত মশার মাধ্যমে ছড়ায় এটি। প্যারাসাইট আক্রান্ত হলে ভেটরা চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। ট্রিটমেন্টের সময় বিড়ালের লালার নমুনা নিয়ে যেতে হয়।
প্যানলিউকপেনিয়া
প্যানলুয়েক ভাইরাল রোগ। বাইরের বিড়ালসহ একাধিক বিড়াল একসঙ্গে থাকলে এটি ছড়ায়। বিড়ালের বোনম্যারো ও অন্ত্রের ক্ষতি করে।
আপার রেসপিরেটরি ইনফেকশন
রোগটির আরেক নাম ফেলাইন হার্পিস ভাইরাস। এর ভ্যাকসিন আছে। রোগের লক্ষণ হচ্ছে হাঁচি বা নাক দিয়ে পানি ঝরা। বিড়ালের চোখও গোলাপি হয়। অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে এর চিকিৎসা করা হয়। বিড়াল থেকে রোগটি মানুষেও সংক্রমিত হতে পারে।
ফেলাইন ইনফেকসিয়াস পেরিটোনিটিস
রোগটি সংক্রামক। দ্রুত ছড়ায়। এর অন্যতম কারণ জেনেটিক বা বংশগত। এ রোগে বিড়ালের মৃত্যুর হার বেশি।
বিড়ালের ডায়াবেটিস
বিড়ালের শরীরেও অনেক সময় ইনসুলিন হরমোন তৈরি হয় না। তখন তার শরীর গ্লুকোজ থেকে শক্তি তৈরি করতে পারে না। এ ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত খাওয়ার পরও দেখা যায় তার গায়ে শক্তি নেই। আবার গ্লুকোজ বেড়ে গিয়ে হতে পারে হাইপারগ্লাইসেমিয়া।
ফেলাইন ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস
এ রোগে আক্রান্ত হলে বিড়ালের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। তবে দীর্ঘদিনেও দেখা যায় এর লক্ষণ ধরা পড়ে না। ক্রনিক পর্যায়ে গেলে দেখা যায় আর বিড়ালকে বাঁচানো সম্ভব হয় না।
বিড়াল কি কি কারণে মারা যায়
- ট্রমা
- হার্ট অ্যাটাক
- ফিলাইন কার্ডিওমিওপ্যাথি
- হার্টওয়ার্ম ডিজিজ
- টক্সিনের এক্সপোজার
- দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ
- ফিলাইন ইউরিনারি অবস্টাকল
- গর্ভবতী অবস্থায় মিস্কারেজ
- দীর্ঘস্থায়ী পচন
বিড়াল মারা যাওয়ার লক্ষণ
- আপনার বিড়াল আর খেতে বা পান আগ্রহী নয়.
- আপনার কৌতুকপূর্ণ এবং উদ্যমী বিড়াল দুর্বল এবং শান্ত হয়ে গেছে.
- তাদের তাপমাত্রা এবং বাঁচার ইচ্ছা কমে গেছে.
- তাদের স্বাস্থ্য ও ওজন হ্রাস পাচ্ছে.
- এটি অগোছালো দেখায় এবং অদ্ভুতভাবে গন্ধ পায়.
- তারা তাদের স্বাভাবিক আরাধ্য ব্যক্তিত্বের মতো আচরণ করছে না.
- তাদের চেহারা পরিবর্তিত হয়েছে এবং তাই আপনার প্রতি তার ভালবাসা.
বিড়াল থেকে কি কি রোগ হয়
ক্যাপনোসাইটোফাগা ক্যানিমোরসাস : তা মানুষকে খুব একটা সংক্রমিত করে না, কিন্তু যখন করে, তখন তা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। উপসর্গের মাঝে রয়েছে ব্লাড পয়জনিং, শক, রেসপিরেটরি ডিসট্রেস এবং মেনিনজাইটিস। এই জীবাণু থেকে নিরাপদ থাকতে কুকুর-বিড়ালের হালকা আঁচড় বা কামড়ের পর জায়গাটি ভালো করে অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে পরিষ্কার করে নিন।
বিড়াল পালনের উপকারিতা
1.কম রক্ষণাবেক্ষণ
বিড়াল তুলনামূলকভাবে কম রক্ষণাবেক্ষণের পোষা প্রাণী, কারণ তারা স্বাধীন এবং কুকুরের মতো এত মনোযোগের প্রয়োজন হয় না।
2.ভাল সঙ্গী
বিড়ালরা দুর্দান্ত সঙ্গী করে, তাদের মালিকদের আরাম এবং সাহচর্য প্রদান করে।
3.ছোট জায়গাগুলির জন্য ভাল
বিড়ালগুলি ছোট থাকার জায়গাগুলির জন্য উপযুক্ত, যেমন অ্যাপার্টমেন্ট, কারণ তাদের ঘোরাঘুরি করার জন্য অনেক জায়গার প্রয়োজন হয় না।
4.ব্যস্ত জীবনধারার লোকদের জন্য ভাল
বিড়ালগুলি ব্যস্ত জীবনধারার লোকদের জন্য ভাল, কারণ তারা স্বাধীন এবং অল্প সময়ের জন্য একা থাকতে পারে।
5.মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য ভাল
উদ্বেগ এবং বিষণ্নতার মতো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিদের উপর বিড়ালদের একটি শান্ত প্রভাব রয়েছে বলে দেখা গেছে।
6.বাচ্চাদের জন্য ভাল
বিড়াল বাচ্চাদের জন্য ভাল, কারণ তারা বাচ্চাদের দায়িত্ব এবং সহানুভূতি শেখাতে পারে।
7.যারা ভ্রমণ করেন তাদের জন্য ভালো
যারা ঘন ঘন ভ্রমণ করেন তাদের জন্য বিড়াল ভালো, কারণ তারা অল্প সময়ের জন্য একা থাকতে পারে।
8.যারা স্ট্রেস কমাতে চান তাদের জন্য ভাল
একটি বিড়ালের মালিকানা স্ট্রেস কমাতে এবং রক্তচাপ কমাতে পাওয়া গেছে।
বিড়াল পালনের অপকারিতা
1.অ্যালার্জি
কিছু লোকের বিড়ালের খুশকি, পশম বা লালা থেকে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
2.স্ক্র্যাচিং এবং নখর কাটা
বিড়ালদের স্ক্র্যাচ এবং নখর করার একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি রয়েছে, যা আসবাবপত্র এবং অন্যান্য গৃহস্থালী সামগ্রীর ক্ষতি করতে পারে।
3.লিটার বাক্সের গন্ধ
একটি বিড়ালের লিটার বাক্স নিয়মিত পরিষ্কার না করলে অপ্রীতিকর গন্ধ নির্গত হতে পারে।
4.স্বাস্থ্য ঝুঁকি
বিড়াল টক্সোপ্লাজমোসিস এবং জলাতঙ্কের মতো রোগগুলি মানুষের কাছে প্রেরণ করতে পারে।
5.ব্যয়বহুল
বিড়ালদের নিয়মিত পশুচিকিৎসা পরীক্ষা, টিকা এবং অসুস্থতার চিকিত্সার প্রয়োজন, যা ব্যয়বহুল হতে পারে।
6.ইনডোর বনাম আউটডোর
সব সময় ঘরে রাখা বিড়ালদের আচরণগত সমস্যা হতে পারে এবং বিরক্তিকর এবং ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠতে পারে। বাইরে রাখা বিড়ালদের আঘাত, অসুস্থতা এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি থাকে।
বিড়ালের বৈশিষ্ট্য
ঘরোয়া বিড়ালগুলো বন্য বিড়ালের চেয়েও আক্রমণাত্মক হয়ে থাকে। মিশর এবং তার পূর্ববর্তী এলাকার বৃহত্তর গবেষণার মাধ্যমে এই আশ্চর্য তথ্য পাওয়া যায়।
বিজ্ঞানীরা ধারণা করে থাকেন বন্য বিড়ালেরা শস্যখাদক ইঁদুর ধরবার তাগিদে বিভিন্ন ক্ষেতে ঘুরে বেড়াতো এবং তখন থেকেই কৃষকেরা এদেরকে বন্ধু ভাবা শুরু করেন।
গবেষক ইভা মারিয়া গেইগল বলেন, বিড়াল দুই ধাপে পোষা শুরু হয়। প্রথমে পূর্বাঞ্চলীয় কোনো দেশে এবং তারও অনেক পরে মিশরে। এরপর বিড়ালগুলো জাহাজে জাহাজে ছড়িয়ে পড়ে কারণ তখন জাহাজে মজুদ করা শস্য এবং পণ্য ইঁদুরের কবল থেকে বাঁচাতে একমাত্র কার্যকরী পন্থা ছিল বিড়াল।
বিড়ালের প্রিয় খাবার
বিড়াল সব ধরনের খাবার যেমন- বিভিন্ন ধরনের মাছ, মুরগির মাংস, গরুর মাংস, ডিম, Cat wet food, Cat dry food ইত্যাদি খায়। সাথে প্রচুর পরিমানে বিশুদ্ধ পানি খেতে দিতে হবে। যেহেতু বিড়াল মাংসাশী প্রাণী তাই ভাত দিলেও অল্প ভাতের সাথে বেশি মাংস মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
বিড়ালের জলাতংক হওয়ার লক্ষ্যন এবং করণীয়
কুকুরের মত বিড়ালেরও জলাতঙ্ক হয় এবং এটি অনেক পরিচিত এবং ভয়ঙ্কর রোগ। এটি একটি প্রাণঘাতী রোগ। এই রোগের ভাইরাস শেয়াল, রেকুন, বাদুর ও ইঁদুর বহন করে থাকে। এই প্রাণীগুলোর কামড়ে অথবা আঁচড়ে বেড়ালের মধ্যে এই রোগ ছড়ায়।
আবার জলাতঙ্কে আক্রান্ত বিড়ালের কামড়ে অথবা আঁচড়ে মানুষের এবং অন্য প্রাণীরও এই রোগ হয়ে থাকে। ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশের পরে মস্তিস্ক পর্যন্ত ছরিয়ে পরে। বিড়ালের ক্ষেত্রে ২-৬ সপ্তাহ ও সময় লাগতে পারে এবং আস্তে আস্তে এ লক্ষনগুলো প্রকাশ পায়।
তাই এই লক্ষনগুলো দেখলেই বিড়ালকে পশু চিকিৎসক দ্বারা পরীক্ষা করাতে হবে। এ রোগে আক্রান্ত বিড়াল খুব বেশিদিন বেঁচে থাকতে পারে না। বিড়ালের এই রোগ হলে তার কোনও চিকিৎসা নেই কিন্তু প্রতিষেধক আছে।
বিড়ালকে Vaccine / প্রতিষেধক দেওয়ার মাধ্যমে এই রোগ থেকে বাঁচানো যায়। তাই সচেতনতার মাধ্যমেই এই রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
বিড়ালের জলাতঙ্কের লক্ষণসমূহ
১) জ্বর আসা কিংবা প্যারালাইসিস হয়ে যাওয়া।
২) হটাৎ আচরণে পরিবর্তন হওয়া অথবা অস্বাভাবিক পাগলের মত আচরণ করা।
৩) হটাৎ হিংস্র হয়ে ওঠা বা কামড় / আঁচর দিতে চাও।
৪) অন্যরকমভাবে ডাকা।
৫) মুখ দিয়ে লালা ঝরা।
৬) ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া।
৭) ভয় পাওয়া এবং পানি পান বন্ধ করে দেওয়া।
বিড়ালের জলাতঙ্কের প্রতিষেধক
শুধুমাত্র rabies vaccine/ জলাতঙ্কের টিকার মাধ্যমে এই রোগের প্রতিরোধ করা সম্ভব। বর্তমানে সব পশু চিকিৎসকের কাছ থেকেই এই টিকা দেওয়া যায়।
বিড়ালকে বলা হয় ‘বাঘের মাসি’। কারণ, বাঘ বিড়াল গোত্রের প্রাণী। এরা প্রায় ৪৮ কিলোমিটার বেগে দৌড়াতে পারে। দৌড়ে এরা উসাইন বোল্টকেও হারিয়ে দিতে সক্ষম। নিজেদের উচ্চতার চেয়ে ৫ গুন ওপরে লাফাতে পারে এরা। বিড়ালেরা মানুষের মতো স্বপ্ন দেখে। পৃথিবীর জনপ্রিয় পোষা প্রানীদের একটি হলো বিড়াল পৃথিবীতে প্রায় পঞ্চাশ কোটি বিড়াল রয়েছে। প্রায় ১০ হাজার বছর আগের থেকে মানুষ বিড়াল পুষছে। বিড়াল সবচেয়ে পরিষ্কার প্রাণীদের একটি। এরা সময় পেলেই নিজের শরীর চেটে পরিস্কার করে।
আরও পড়ুনঃ
বিড়ালের রোগ ও উপসর্গ – বিড়ালের কি কি রোগ হতে পারে – বিড়ালের রোগের ট্রিটমেন্ট করবো কিভাবে – বিড়ালের রোগ ও উপসর্গ