ভুমিকম্প কেন হয়: প্রায় সকল দেশেই ভূমিকম্প হয়ে থাকে। ভূমিকম্প মানেই হচ্ছে আতঙ্ক। পৃথিবীতে বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে চলেছে৷ কিন্তু, এসবের মধ্যে ভুমিকম্প হলো সবচেয়ে ভয়াবহ। কারণ এর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়ে অনেক বেশি। একবার বড় কোনো ভূমিকম্প হলে অনেক ক্ষতি হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গোটা ভূপৃষ্ঠই কয়েকটি স্তরে বিভক্ত রয়েছে। আবার প্রতিটি স্তর কয়েকটি প্লেটে বিভক্ত। এসব বিশাল আকারের টেকটোনিক প্লেটগুলো যখন একের সঙ্গে অপরে ধাক্কা খায়, তখনই কেঁপে ওঠে মাটির নীচের তলদেশ। আর আমরা ভূপৃষ্ঠের ওপর ভূকম্পন অনুভুত করে থাকি।
ভূমিকম্প কি? (What is an earthquake?)
ভূমিকম্প হচ্ছে ভূমির কম্পন।
একটি শিলা যখন অন্য একটি শিলার উপরে উঠে আসে তখনই ভূমিকম্প হয়। পৃথিবীপৃষ্ঠের অংশবিশেষের হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তন বা আন্দোলনই ভূমিকম্পন। হঠাৎ যদি ঘরের কোনো জিনিস দুলতে শুরু করে—যেমন, দেয়ালঘড়ি, টাঙানো ছবি বা খাটসহ অন্য যেকোন আসবাব—বুঝতে হবে ভূমিকম্প হচ্ছে। সহজ কথায় পৃথিবীর কেঁপে ওঠাই ভূমিকম্প।
পুরো পৃথিবীতে বছরে গড়ে ছয় হাজার ভূমিকম্প হয়। এগুলোর বেশিরভাগই মৃদু, যেগুলো আমরা টের পাই না। সাধারণত তিন ধরনের ভূমিকম্প হয়ে থাকে—প্রচণ্ড, মাঝারি ও মৃদু। আবার উৎসের গভীরতা অনুসারে ভূমিকম্পকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়—অগভীর, মধ্যবর্তী ও গভীর ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ভূ-পৃষ্ঠের ৮০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে অগভীর, ৭০ থেকে ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে মধ্যবর্তী এবং ২০০ কিলোমিটারের নিচে হলে তাকে গভীর ভূমিকম্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।
ভূমিকম্প কেন হয় (Why do earthquakes happen?)
পৃথিবীর গ্যাস যখন ভূ-পৃষ্ঠের ফাটল বা আগ্নেয়গিরির মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে তখন সেই গ্যাসের অবস্থানটি ফাঁকা হয়ে পড়ে রায়। আর তখন পৃথিবীর উপরের তলের চাপ ওই ফাঁকা স্থানে দেবে গিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখে। ভূ-পৃষ্ঠে প্রবল কম্পনের অনুভব হয় যা ভূমিকম্প নামে পরিচিত। সাধারণত ৩টি প্রধান কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়ে থাকে—ভূ-পৃষ্ঠের হঠাৎ পরিবর্তন জনিত কারণে, আগ্নেয়গিরি সংঘটিত হওয়ার কারণে ও শিলাচ্যুতি জনিত কারণে হয়ে থাকে।
ভূমিকম্প হলে করণীয় (What to do in case of an earthquake)
১) ভূকম্পন অনুভূত হলে আতঙ্কিত হবেন না।
২)ভূকম্পনের সময় বিছানায় থাকলে বালিশ দিয়ে মাথা ঢেকে টেবিল, ডেস্ক বা শক্ত কোনো আসবাবের নিচে আশ্রয় নিন।
৩) রান্নাঘরে থাকলে গ্যাসের চুলা বন্ধ করে দ্রুত বেরিয়ে আসুন।
৪)শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবস্থানকালে স্কুলব্যাগ মাথায় দিয়ে শক্ত বেঞ্চ অথবা শক্ত টেবিলের নিচে আশ্রয় নিন।
৫) ঘরের বাইরে থাকলে গাছ, উঁচু বাড়ি, বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে খোলাস্থানে আশ্রয় নিন।গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, হাসপাতাল, মার্কেট ও সিনেমা হলে থাকলে বের হওয়ার জন্য দরজার সামনে ভিড় কিংবা ধাক্কাধাক্কি না করে দুহাতে মাথা ঢেকে বসে পড়ুন।
৬) ভাঙা দেয়ালের নিচে চাপা পড়লে বেশি নড়াচড়ার চেষ্টা করবেন না। কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন, যাতে ধুলাবালু শ্বাসনালিতে না ঢোকে।
৭) একবার কম্পন হওয়ার পর আবারও কম্পন হতে পারে। তাই সুযোগ বুঝে বের হয়ে খালি জায়গায় আশ্রয় নিন।
৮) ওপর তলায় থাকলে কম্পন বা ঝাঁকুনি না থামা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে; তাড়াহুড়ো করে লাফ দিয়ে বা লিফট ব্যবহার করে নামা থেকে বিরত থাকুন।
৯) কম্পন বা ঝাঁকুনি থামলে সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে পড়ুন এবং খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিন।
১০) বিম, কলাম ও পিলার ঘেঁষে আশ্রয় নিন।
ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব (Earthquake stability)
ভূমিকম্প বেশীক্ষণ হয় না। ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব সাধারণত কয়েক সেকেন্ড হয়ে থাকে। কিন্তু এই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে হয়ে যেতে পারে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ। ভূমিকম্পের মাত্রা অনুযায়ী ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ণয়ের জন্য যে যন্ত্র ব্যবহৃত হয় তার নাম রিখটার স্কেল। রিখটার স্কেলে এককের সীমা ১ থেকে ৮/১০ পর্যন্ত। এই স্কেলে মাত্রা ৪,৫ এর বেশি হওয়া মানেই ভয়াবহ দুর্যোগের আশঙ্কা। ভূমিকম্প এক ডিগ্রি বৃদ্ধি পেলে এর মাত্রা ৮ থেকে ৩০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা—৪-৫.০০ মাঝারি, ৫-৫.০০ তীব্র, ৬-৬.০০ ভয়াবহ এবং ৭,৮এর উপর অত্যন্ত ভয়াবহ হয়।
ভূমিকম্পের জন্য প্রস্তুতি (Preparing for earthquakes)
ভূমিকম্প হওয়ার আগে টের পাওয়া যায় না। ভূমিকম্প থামানোর কোন উপায় না থাকলেও এই দুর্ঘটনার আগে পূর্ব প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব হলে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি সামাল দেয়া সহজ হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ভূমিকম্প মোকাবেলায় তেমন কোন প্রস্তুতি না থাকার অভিযোগ উঠলেও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান গত সপ্তাহে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছিলেন, উদ্ধার কাজের জন্য সিটি কর্পোরেশনগুলোকে আলাদা আলাদা অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। এসব অঞ্চলে ৩০ হাজার প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তাদের দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয়েছে। দায়িত্ব রয়েছে সামরিক বাহিনীগুলোরও।
এবং ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধারকাজ দ্রুত ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে মহড়া ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সব এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের আগে থেকে প্রস্তুত রাখার বিকল্প নেই বলে মনে করের বিশেষজ্ঞরা।এছাড়াও ভূমিকম্প হলে স্মার্টফোনের মাধ্যমে জরুরি খবর পাঠানোর ব্যবস্থা করা, ভূমিকম্প বিষয়ক গেমের মাধ্যমে তরুণদের মধ্যে সতর্কতা তৈরি করা সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষের মাঝে ভূমিকম্প নিয়ে সচেতনতা তৈরি করার মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব বলে মনে করেন ভূতত্ত্ববিদরা।
ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে করণীয় (What to Do After an Earthquake)
ভূমিকম্প শেষ হওয়ার পড়ে কিছুক্ষণ পরে আবার একটি ধাক্কা দিতে পারে। তাই ভূমিকম্প শেষ হওয়ার পর পরই নিজের স্থান ত্যাগ করে বের হয়ে জড় হবেন নাহ। শেষ হওয়ার অনেক সময় পর আসতে আসতে শৃঙ্খলার সাথে বের হতে হবেহ। এরপর রেডিও কিংবা টেলিভিশন অর্থাৎ সংবাদের দিকে কান দিতে হবে এবং সেখানের সকল নির্দেশনা মানতে হবেহ।
যেসকল ভবন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সেই সব ভবন থেকে সবাইকে উদ্ধার করতে হবে। বিদ্যুৎ, গ্যাস লাইনে কোনও ক্ষতি হয়েছে কি না তা দেখে নিতে হবেহ। সরকারি সেবামুলক টীম (উদ্ধার কর্মী) এর সাথে বেসরকারি টিমকেও কাজ করতে হবেহ।
উদ্ধার এবং ত্রাণ নিশ্চিত করতে হবেহ।
শেষ কথা
সবচেয়ে বড় কথা একটি ভূমিকম্পের সময় যেটুকু সময় পাওয়া যায় সেসময় মাথা ঠান্ডা রাখা অসম্ভব হয়ে। কিন্তু আমাদের চেষ্টা করতে হবে।আশা করছি ভূমিকম্পের মতো একটি প্রাকৃতিক কঠিন দুর্যোগ মোকাবেলা এবং সতরকতা সম্পর্কে বেশ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পেরেছেন।
আরো পড়ূনঃ
বাচ্চাদের মেধাবী বানাবেন কিভাবে
ভুমিকম্প কেন হয়? ভুমিকম্প হলে করনীয় কি? ভুমিকম্প কেন হয়? ভুমিকম্প হলে করনীয় কি? ভুমিকম্প কেন হয়? ভুমিকম্প হলে করনীয় কি? ভুমিকম্প কেন হয়? ভুমিকম্প হলে করনীয় কি? ভুমিকম্প কেন হয়? ভুমিকম্প হলে করনীয় কি? ভুমিকম্প কেন হয়? ভুমিকম্প হলে করনীয় কি? ভুমিকম্প কেন হয়? ভুমিকম্প হলে করনীয় কি? ভুমিকম্প কেন হয়? ভুমিকম্প হলে করনীয় কি? ভুমিকম্প কেন হয়? ভুমিকম্প হলে করনীয় কি? ভুমিকম্প কেন হয়? ভুমিকম্প হলে করনীয় কি?