মহাসাগর বা মহাসমুদ্র, মহাসিন্ধু অতি প্রকাণ্ড ও লবণযুক্ত বিপুল জলরাশি যা পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে।
স্বীকৃত ৫ টি মহাসাগর :
১.প্রশান্ত,
২.আটলান্টিক,
৩.ভারতীয়,
৪.অ্যান্টার্কটিক মহাসাগর
৫.উত্তর মহসাগর
মহাসাগরগুলি একত্রে পৃথিবীর মোট আয়তনের (৩.৬১×১০১৪ বর্গ মিটার) প্রায় ৭০.৯% স্থান দখল করে আছে। এ বিপুল জলরাশি আবার অনেকগুলো মহাসাগর ও ছোট ছোট সমুদ্রে বিভক্ত। মহাসাগরের অর্ধেকেরও বেশি জায়গার গড় গভীরতা ৩,০০০ মিটারেরও (৯,৮০০ বর্গফুট) বেশি। মহাসাগরের জলের গড় লবণাক্ততা ৩.৫% এবং প্রায় সকল সমুদ্রের গড় লবণাক্ততা ৩% থেকে ৩.৮%৮। বৈজ্ঞানিকেরা হিসেব করে দেখেছেন যে, মহাসাগরে প্রায় ২,৩০,০০০ সামুদ্রিক ও জলজ প্রাণী রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সামুদ্রিক ও জলজ প্রাণীর সংখ্যা নির্ণিত সংখ্যার তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি।
প্রচলিতভাবে আমরা বিভিন্ন ধরনের মহাসাগরের নাম দেখতে পাই। একসময় বর্তমানকালের মহাসাগরগুলোর আন্তঃসংযোগকৃত লবণাক্ত জলরাশি ‘বৈশ্বিক মহাসাগর’ হিসেবে নির্দেশ করতো। মহাসাগর মূলতঃ একটি।পাশ্চাত্ত্য ভূগোলবিদরা তাদের নিজেদের সুবিধার্থে মহাসাগরকে ৫টি অংশে বিভক্ত করেছেন। মহাসাগরীয় বিভাজনসমূহ সংজ্ঞায়িত এবং মূল্যায়িত হয়েছে – মহাদেশ, মাটির স্তর এবং অন্যান্য শর্তাবলীর আলোকে।
১.প্রশান্ত
প্রশান্ত মহাসাগর পৃৃথিবীর মহাসাগর সম্বন্ধীয় বিভাগগুলির মধ্যে উপরি ক্ষেত্রফল ও গভীরতার বিচারে সর্বাধিক৷ এটি উত্তরে উত্তর মহাসাগর বা সুমেরু মহাসাগর থেকে দক্ষিণ মহাসাগর বা কুমেরু মহাসাগর, পক্ষান্তরে সংজ্ঞানুযায়ী অ্যান্টার্কটিকা পর্যন্ত বিস্তৃত৷ এর পশ্চিম সীমান্তে রয়েছে এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া এবং পূর্ব সীমান্তে রয়েছে উভয় আমেরিকা৷
আয়তনে ১৬,৫২,৫০,০০০ বর্গকিলোমিটার (৬,৩৮,০০,০০০ বর্গমাইল) অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত (আন্টার্কটিকা সংলগ্ন কুমেরু সাগরের সীমা সংজ্ঞায়িত করে) প্রশান্ত মহাসাগর বিশ্ব মহাসাগরের উপক্ষেত্রগুলির মধ্যে সর্বাধিক এবং পৃথিবীর মোট জলভাগের উপরিতলের ৪৬ শতাংশ ও পৃথিবীর পৃষ্ঠতলের ৩২ শতাংশ অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত, যা পৃথিবীর একক স্থলভাগ ও জলভাগের ক্ষেত্রফলের তুলনায় বৃৃহত্তর তথা ১৪,৮০,০০,০০০ বর্গ কিলোমিটার ৷ জল গোলার্ধ এবং পশ্চিম গোলার্ধ উভয়েরই কেন্দ্রবিন্দু রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরে৷ প্রশান্ত মহাসাগরকে দুটি বৃহত্তর স্বতন্ত্র জলরাশিতে বিভক্ত করেছে, যা উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর ও দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর নামে পরিচিত৷ ক্ষেত্রদুটি নিরক্ষরেখা অঞ্চলে মিলিত হয়৷ নিরক্ষরেখার নিকট দ্ব্যর্থকভাবে অবস্থান করা গালাপাগোস এবং গিলবার্ট দ্বীপপুঞ্জকে পুরোপুরিভাবে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের অংশ হিসাবে গণ্য করা হয়ে থাকে৷
এটির গড় গভীরতা ৪,০০০ মিটার (১৩,০০০ ফুট)৷[৩] পশ্চিমা উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত মারিয়ানা খাতেরচ্যালেঞ্জার ডিপ বিশ্বের গভীরতম বিন্দু, যার গভীরতা মোটামুটি ১০,৯২৮ মিটার (৩৫,৮৫৩ ফুট).দক্ষিণ গোলার্ধের গভীরতম বিন্দু টোঙ্গা খাতের১০,৮২৩ মিটার (৩৫,৫০৯ ফুট) গভীর হরাইজন ডিপও প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত৷[৫] পৃথিবীর তৃৃৃতীয় গভীরতম বিন্দু সিরেনা ডিপও মারিয়ানা খাতে অবস্থিত৷
পশ্চিম প্রশান্তত মহাসাগরে রয়েছে একাধিক বৃহত্তম পর্যন্তিক সাগর৷ এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু সাগর হলো দক্ষিণ চীন সাগর, পূর্ব চীন সাগর, জাপান সাগর, ওখোৎস্ক সাগর, ফিলিপাইন সাগর, কোরাল সাগর এবং তাসমান সাগর৷
আটলান্টিক মহাসাগর বা অতলান্ত মহাসাগর পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগর। এর আয়তন ১০৬,৪৬০,০০০ বর্গকিলোমিটার (৪১.১ মিলিয়ন বর্গমাইল); এটি পৃথিবীপৃষ্ঠের প্রায় এক পঞ্চমাংশ এলাকা জুড়ে অবস্থিত। ইউরোপীয় ধারণা অনুযায়ী, এটি “পুরাতন পৃথিবীকে” “নতুন পৃথিবীর” থেকে আলাদা রাখে।
২. আটলান্টিক
আটলান্টিক মহাসাগরটি পূর্বদিকে ইউরোপ এবং আফ্রিকা এবং পশ্চিমে আমেরিকার অঞ্চলের মধ্যবর্তী অঞ্চলে দীর্ঘায়িত, এস-আকৃতির অববাহিকা রূপে অবস্থিত। আন্তঃসংযুক্ত বিশ্ব মহাসাগরের একটি অংশ হিসাবে, এটি উত্তরে সুমেরু মহাসাগর, দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর , দক্ষিণ-পূর্বে ভারত মহাসাগর এবং দক্ষিণে দক্ষিণ মহাসাগরের সাথে সংযুক্ত (অনেক সংজ্ঞায় আটলান্টিককে অ্যান্টার্কটিকার দক্ষিণে বিস্তৃত হিসাবে বর্ণনা করা হয়)। নিরক্ষীয় বিপরীত স্রোত আটলান্টিক মহাসাগরকে প্রায় ৮ ডিগ্রি উত্তর অক্ষরেখা মহাসাগরটিকে উত্তর আটলান্টিক ও দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে বিভক্ত করেছে।
৩.ভারত মহাসাগর
ভারত মহাসাগর হল বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মহাসাগর। পৃথিবীর মোট জলভাগের ২০ শতাংশ এই মহাসাগর অধিকার করে আছে। এই মহাসাগরের উত্তর সীমায় রয়েছে ভারতীয় উপমহাদেশ; পশ্চিমে রয়েছে পূর্ব আফ্রিকা; পূর্বে রয়েছে ইন্দোচীন, সুন্দা দ্বীপপুঞ্জ ও অস্ট্রেলিয়া; এবং দক্ষিণে রয়েছে দক্ষিণ মহাসাগর সংজ্ঞান্তরে অ্যান্টার্কটিকা।
ভারত মহাসাগর বিশ্ব মহাসাগরগুলির সঙ্গে আন্তঃসম্পর্কযুক্ত। ২০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমা আটলান্টিক মহাসাগর থেকে এবং ১৪৬°৫৫’ পূর্ব দ্রাঘিমা প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ভারত মহাসাগরকে বিচ্ছিন্ন করেছে।ভারত মহাসাগরের সর্ব-উত্তর অংশটি পারস্য উপসাগরের ৩০ ডিগ্রি অক্ষরেখায় অবস্থিত। দক্ষিণভাগে (আফ্রিকা থেকে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত) ভারত মহাসাগরের প্রস্থ প্রায় ১০,০০০ কিলোমিটার (৬,২০০ মাইল)। লোহিত সাগর ও পারস্য উপসাগরসহ এই মহাসাগরের মোট আয়তন ৭৩,৫৫৬,০০০ বর্গ কিলোমিটার (২৮,৩৫০,০০০ বর্গ মাইল)।
ভারত মহাসাগরের ঘনত্ব ২৯২,১৩১,০০০ ঘন কিলোমিটার (৭০,০৮৬,০০০ ঘন মাইল)। মহাসাগরের মহাদেশীয় প্রান্তসীমায় অনেক ছোটো ছোটো দ্বীপ অবস্থিত। ভারত মহাসাগরে অবস্থিত দ্বীপরাষ্ট্রগুলি হল মাদাগাস্কার (বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম দ্বীপ), রিইউনিয়ন দ্বীপ, কোমোরোস, সেশেল, মালদ্বীপ, মরিশাস ও শ্রীলঙ্কা। ইন্দোনেশিয়া দ্বীপপুঞ্জ এই মহাদেশের পূর্ব সীমায় অবস্থিত।
৪. অ্যান্টার্কটিক বা দক্ষিন মহাসাগর
দক্ষিণ মহাসাগর বা অ্যান্টার্কটিক মহাসাগর হল পৃথিবীর সবচেয়ে দক্ষিণের জলরাশি যার অবস্থান অক্ষাংশ ৬০° দক্ষিণ। ইন্টারনেশনাল হাইড্রোগ্রাফিক অরগানাইজেশন অ্যান্টার্কটিকাকে ঘিরে বিশাল জলরাশিকে দক্ষিণ মহাসাগর হিসেবে চিহ্নিত করেছে।এটি পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম মহাসাগর। দক্ষিণ মহাসাগরের আয়তন ১ কোটি ৪৭ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার।
৫. উত্তর
উত্তর মহাসাগর বা সুমেরু মহাসাগর উত্তর গোলার্ধের সুমেরু অঞ্চলে অবস্থিত বিশ্বের ক্ষুদ্রতম এবং সর্বাপেক্ষা কম গভীর একটি মহাসাগর। এটি পৃথিবীর পাঁচটি প্রধান মহাসাগরের অন্যতম। ইন্টারন্যাশানাল হাইড্রোগ্রাফিক অর্গানাইজেশন (আইএইচও) তথা আন্তর্জাতিক জললেখচিত্রন সংস্থা এটিকে মহাসাগরের স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে কোনো কোনো সমুদ্রবিদ এটিকে সুমেরু ভূমধ্যসাগর (Arctic Mediterranean Sea) বা সুমেরু সাগর (Arctic Sea)। তাদের মতে এটি আটলান্টিক মহাসাগরের একটি ভূমধ্যসাগর। অন্যমতে, উত্তর মহাসাগর সব মহাসাগরের সমষ্টি বিশ্ব মহাসাগরের সর্ব-উত্তরে অবস্থিত অংশ।
উত্তর মহাসাগরের প্রায় সমগ্র অংশই ইউরেশিয়া ও উত্তর আমেরিকা মহাদেশ দ্বারা বেষ্টিত। বছরের অধিকাংশ সময় এই মহাসাগরের অংশবিশেষ সামুদ্রিক বরফে ঢাকা থাকে। শীতকালে সম্পূর্ণ মহাসাগরটিই বরফে ঢাকা পড়ে যায়। উত্তর মহাসাগরের তাপমাত্রা ও লবণাক্ততা ঋতু অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয়। সমুদ্রের বরফের আবরণীর গলন ও জমাট বাঁধার কারণেই এমনটি হয়ে থাকে।
পাঁচটি প্রধান মহাসাগরের তুলনায় এই মহাসাগরের জলের লবণাক্ততা কম। এর কারণ, বাষ্পীভবনের নিম্ন হার, বিভিন্ন বড়ো ও ছোটো নদী থেকে এসে মেশা মিষ্টি জলের প্রবাহ এবং পার্শ্ববর্তী উচ্চ লবণাক্ততাযুক্ত মহাসাগরগুলির সঙ্গে সীমাবদ্ধ সংযোগ ও বহির্গমন স্রোত। গ্রীষ্মকালে প্রায় ৫০% বরফ গলে যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশানাল স্নো অ্যান্ড আইস ডেটা সেন্টার (এনএসআইডিসি) উপগ্রহ তথ্যের মাধ্যমে গড় সময়কাল ও নির্দিষ্ট পূর্ববর্ষের সঙ্গে তুলনা করার জন্য উত্তর মহাসাগরের বরফাবরণী ও বরফ গলনের দৈনিক তথ্য রাখে।
তথ্যসুত্রঃ এখানে দেয়া সকল তথ্য উইকিপিডিয়া থেকে সংগ্রহীত ।
আর ও পড়ুন বাংলাদেশের সকল ব্যাংকের তালিকা