বাংলাদেশের আলিয়া মাদ্রাসার মধ্যে সরকারি মাদ্রাসা ও সাধারণ এমপিও ভুক্ত (সরকারি অনুমোদন, অনুদান ভুক্ত) মাদ্রাসা রয়েছে। এছাড়াও কিছু কিছু আলিয়া মাদ্রাসায় আলিয়া কার্যক্রম চালানোর পাশাপাশি হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও কওমি মাদ্রাসা পরিচালনা করে থাকে। বাংলাদেশে বর্তমানে মাত্র ৩টি সরকারি আলিয়া মাদরাসা রয়েছে। এবং ১৯০০ সালের দিকে কিছু কলকাতা মাদ্রাসার আদলে বাংলাদেশেও সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো, কিন্তু সেগুলো কালের পরিক্রিমায় নাম পরিবর্তিত হয়ে স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচিতে পরিচালিত হচ্ছে।
সরকারি আলিয়া মাদরাসা মোট ৩ টি
- সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকা
- সরকারি সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা,
- সরকারি মুস্তাফাবিয়া আলিয়া মাদ্রাসা বগুড়া
পূর্বে যে তিনটি মাদরাসা সরকারি আলিয়া মাদরাসা ছিল
- রাজশাহী মাদ্রাসা (প্রতিষ্ঠা ১৮৭৪) (নাম পরিবর্তন ২০১৯, বর্তমান নাম: হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, রাজশাহী)
- ঢাকা মোহসিনীয়া মাদ্রাসা (প্রতিষ্ঠা ১৮৭৪) (নাম পরিবর্তন ১৯৭২, বর্তমান নাম: কবি নজরুল সরকারি কলেজ, ঢাকা)
- চট্টগ্রাম মোহসিনীয়া মাদ্রাসা (প্রতিষ্ঠা ১৯৭৪) (নাম পরিবর্তন ১৯২৭, বর্তমান নাম: সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, চট্টগ্রাম
সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকা
১৯৪৭ সালে আলিয়া মাদরাসা কলকাতা থেকে ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়। ঢাকায় দাপ্তরিকভাবে মাদরাসা-ই আলিয়া ঢাকা নামে পরিচালিত হলেও ঢাকা আলিয়া নামেই অধিক পরিচিত। ঢাকা আলিয়া মাদরাসার প্রথম অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন খান বাহাদুর মাওলানা জিয়াউল হক। বর্তমানে ঢাকা আলিয়ার অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন প্রফেসর সিরাজ উদ্দিন আহমাদ। কলকাতা আলিয়া ঢাকায় স্থানান্তরিত হলেও কলকাতায় এখনো আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় নামে মাদরাসা বিদ্যমান রয়েছে।
ঢাকায় স্থানান্তরেরর পর প্রথমে লক্ষ্মীবাজারে ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমানে কবি নজরুল সরকারি কলেজ)-এ মাদরাসার কার্যক্রম চলতে থাকে। পরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খান ১৯৫৮ সালের ১১ মার্চ ঢাকার বকশীবাজারে মাদরাসার চারতলাবিশিষ্ট নতুন ভবন ও ছাত্রাবাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলে ১৯৬১ সালে লক্ষ্মীবাজার থেকে বকশীবাজারে নিজস্ব ভবনে মাদরাসা স্থানান্তরিত হয়।
২০০৬ সালে ফাজিল এবং কামিলকে ডিগ্রি এবং অনার্সের সরকারি মান ঘোষণা দেয়ার পর ঢাকা আলিয়া মাদরাসা কুষ্টিয়া ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত হয়। বর্তমানে ঢাকা আলিয়াসহ দেশের সব আলিয়া মাদরাসাকে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছে।
সরকারি সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা
সিলেট শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌহাট্টায় অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটি সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের বিপরীত পার্শ্বে অবস্থিত। প্রথম দিকে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাশ সিলেট শহরের নইয়ুরপুল এলাকায় আঞ্জুমানে ইসলামিয়া নামে একটি ছোট বেসরকারি মাদরাসা ছিল। তৎকালীন আসাম সরকারের শিক্ষামন্ত্রী খান বাহাদুর আব্দুল মজীদ এ মাদ্রাসাটি সম্প্রসারণ ও সরকারিকরণের উদ্যেগ গ্রহণ করেন।
১৯১৩ সালে সরকার কলকাতা আলিয়া মাদরাসার অধীনে সিলেট শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌহাট্টায় একটি সিনিয়র মাদ্রাসা পুনঃস্থাপন করে। ১৯৩৩ সালে এ মাদ্ঢ্করাসাকে সেকেন্ডারি বোর্ডের অধীনে নিউ স্কিমে হাই মাদরাসা পরিণত করা হয়। পরবর্তীকালে এ মাদ্রাসাটিই সিলেট আলিয়া মাদরাসা নামে পরিচিত পায়। আবু নসর ওহী’দের প্রচেষ্টায় সিলেট আলিয়া মাদরাসা ১৯৩৫ সালে কামিল হাদীস মঞ্জুরি লাভ করে. সিলেট আলিয়া মাদরাসা দেশের আলিয়া মাদরাসা ধারার প্রথম কামিল মাদ্রাসা।
সরকারি মুস্তাফাবিয়া আলিয়া মাদ্রাসা বগুড়া
সরকারি মুস্তাফাবিয়া আলিয়া মাদ্রাসা, বগুড়া অবস্থিত উত্তরবঙ্গের একমাত্র সরকারি ও স্বনামধন্য ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনস্থ একটি কামিল (স্নাতকোত্তর) মাদ্রাসা।
আলিয়া মাদ্রাসা বা আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা ভারতীয় উপমহাদেশের ইসলামী ও সাধারণ শিক্ষার সমন্বয়ে গঠিত এক আধুনিক ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থা, যা ভারতে ব্রিটিশ শাসনের শুরুর পরে উপমহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন শিক্ষা পদ্ধতি বলে বিবেচিত হয়ে থাকে।১৭৮০ সালে বাংলার ফোর্ট উইলিয়ামের গর্ভনর ওয়ারেন হেস্টিসং কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন ঘটান। পরবর্তী সময়ে এই কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার আদলে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে বহু মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, মূলত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোকেই আলিয়া মাদ্রাসা বলা হয়।
আলিয়া মাদ্রাসায় কুরআন, হাদিস, বিজ্ঞান, গণিত, ইংরেজিসহ সকল সাধারণ বিষয় পড়ানো হয়। এইজন্য আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে।পাঠ্যক্রম অনুযায়ী আলিয়া মাদ্রাসায় ইবতেদায়ী বা প্রাথমিক শিক্ষায় ৫ বছর, দাখিল বা মাধ্যমিক শিক্ষায় ৫ বছর, আলিম বা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষায় দুই বছর, ফাজিল বা স্নাতক শিক্ষায় দুই বছর এবং কামিল বা স্নাতকোত্তর শিক্ষায় দুই বছর ব্যয় করতে হয়। সবমিলিয়ে ইবতেদায়ী থেকে কামিল পর্যন্ত মোট ১৬ বছরের কোর্সে পরিচালিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের আলিয়া মাদ্রাসার ইবতেদায়ী, দাখিল ও আলিম স্তর বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এবং ফাজিল ও কামিল স্তর ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রয়েছে।
বাংলাদেশে সরকারি আলিয়া মাদরাসা কয়টি?
উত্তরঃ ৩ টি
আরও পড়ুন বাংলাদেশের সেরা রিয়েল এস্টেট কোম্পানি