হরতকির ভেষজ গুনঃ হরতকি এমন একটি ভেষজ উদ্ভিদ। যার ফল,মূল ও ছাল সবই ব্যবহৃত হয়। রতকি ফল বা হরতকি ফল যাকে ইংরেজিতে “Haritaki” বা “Terminalia chebula “বলা হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক ঔষধ গুলির মধ্যে এটি হচ্ছে একটি। এটি মূলত দক্ষিণ এশিয়ায় বেশি পাওয়া যায়। হরতকিতে বিভিন্ন রকমের কেমিক্যাল থাকে, যা এই ফলের গুণ বাড়াতে সাহায্য করে। ভাষণ জেনে নেই এই ফলের উপকারিতা, অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত।
পরিচিতি (Introduction)
হরতকি গাছ সাধারণত মাঝারি থেকে বৃহৎ আকারের হয়ে থাকে।উচ্চতায় প্রায় ২০-৩০ মিটার হয়। এর বাকল গাঢ় বাদামী রঙের হয় এবং বাকলে লম্বা ফাটল থাকে। গাছের পাতা লম্বাকৃতির এবং ৭-২০ সে.মি. হয়ে থাকে। হরতকির ফুল সাধারণত সাদা এবং হলুদ রঙের হয়ে থাকে। ফল ড্রপ, ঝুলন্ত ও প্রায় ৪ থেকে ৫ সেন্টিমিটার লম্বা সবুজ রঙের হয়। কাঠের রং হয় ঘণ বেগুনি, খুব শক্ত, ভারি ও মাঝারি আকারের টেকসই।
হরতকির ভেষজ গুন(Medicinal properties of Harataki)
এই ফলটিতে অ্যান্থাইন কুইনোন থাকার কারণে এটি রেচক বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ। কোষ্ঠকাঠিণ্য দূর করে হরতকি। অ্যালার্জি দূর করতে বিশেষ উপকারি হলো হরতকি। পানির মধ্যে হরতকি ফুটিয়ে সেই পানি খেলে শরীরের অ্যালার্জি কমে যেতে পারে। হরতকির গুঁড়ো নারকেল তেলের সঙ্গে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে মাথায় লাগাতে পারেন। তবে চুল খুবই ভালো থাকবে। এর গুঁড়ো পানিতে মিশিয়ে খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও ঠান্ডার মধ্যে অনেকেরই গলা ব্যাথা হয়ে থাকে বা অ্যালার্জিতে মুখ ফুলে যায়।
এ ধরণের সমস্যা হলে হরতকি পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি পান করলে অনেকটা আরাম পাবেন। এমনকি দাঁতের ব্যাথাও ভীষণ আরাম দিতে পারে হরতকি। তবে হরতকিতে কারো কোনো সমস্যা থাকলে বা ত্বকের কোনো জটিল রোগ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এটি ব্যবহার করবেন।
হরতকির উপকারিতা ও ব্যবহার (Benefits and Uses of Harataki)
উপরিক্ত আগেই বলা হয়েছে এই গাছের অনেক গুনাগুন রয়েছে।
কোষ্ঠকাঠিন্যর রোগ
এই রোগ খুবই মারাত্মক ও বেদনা দায়ক। এই রোগ হলে শরীর শুকিয়ে যায় রোগির খাওয়ার রুচি থাকে না। এই রোগ যদি কেউ সহজে না সারাতে পারে তাহে তার পর্বতীতে আরো বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিবে। এই রোগ কে দ্রুত্ব সারাতে হতে। এই রোগ নিরাময়ের সহজ পদ্ধতি হলো হরিতকির ভেজানোর পানি পান করেন নিয়মিত দেখবেন কয়েক দিনের মধ্যে ভালো উপকার পাবনে।
হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে
যাদের হজম ক্ষমতার সমস্যা হয়। যখন আপনার খাবারের মধ্যে থাকা পুষ্টিগুণ ভাল ভাবে শরীরে মেশে না। এমন কি ভাল করে পাকস্থলী খাবার পরিপাক করতে না পারলে হজমে সমস্যা হয়। এই হজমের সমস্যা সমাধানের জন্য পাকস্থলীর যাবতীয় কাজ ঠিক ভাবে হওয়া দরকার। এই হরিতকী ঠিক এই কাজটিই করে। কেউ যদি দুপুরে আর রাতে খাবারের পর হরিতকী গুঁড়ো যদি অল্প উষ্ণ গরম জলে মিশিয়ে খেতে পারেন তাহলে খুব ভাল উপকার পাবেন। তবে এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যাও কমবে।
এলার্জি রোগ
এই রোগ অনেকেরই হয়ে থাকে শুধুমাত্র এলার্জিজনিত খাবারের কারণে। এলার্জির মত রোগ হরতকি ভেজানো পানি খেলে ভালো হয়ে যায়।
ত্বকের যত্নে
আমরা সবাই ত্বক ভালো রাখতে চাই তবে কয় জনে পারি। আপনি যদি ত্বক ভালো রাখতে চান তাহলে হরিতকির গুড়া পানিতে ভিজিয়ে রেখে নিয়মিত খেলে ত্বক ধীরে ধীরে উজ্জল হবে।
চুলের যত্নে
আপনি যেটা করবেন একটি পাত্রে সব উপকরণ নিয়ে পানি দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন। তারপর সপ্তাহে এক দিন চুলে এই মিশ্রণ ব্যবহার করে ১ ঘণ্টা রেখে দিন। এরপর ভাল করে ধুয়ে কন্ডিশনার ব্যবহার করে নিন। তারপর শ্যাম্পু আলাদা করতে হবে না। বরংচ চুল ফুরফুরে হবে এবং চুলের স্বাস্থ্য ভাল থাকবে।
ডায়াবেটিস নিরাময়ে
এখনকার দিনে ডায়াবেটিস প্রায় মহামারীর পর্যায়ে চলে গেছে। ডায়াবেটিস প্রত্যেক ঘরে ঘরে আজ এই সমস্যা। ডায়াবেটিসকে আয়ুর্বেদ বলছে হরিতকী রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ার সমস্যাতেও উপকারে আসে। তবে এর মধ্যে থাকা হাইপোগ্লাইকেমিক উপাদান শর্করার মাত্রা রক্তে ঠিক রাখে। এই হরিতকী ফল গ্লুকোজের অতিরিক্ত উৎপাদন হতে দেয় না, একটা ভারসাম্য বজায় রাখে। এর ফলে আমরা ডায়াবেটিসের সমস্যায় কম ভুগি।
হরতকি খাওয়ার নিয়ম (Haratki eating rules)
হরিতকী খাবার কিছু নিয়ম আছে। সেই নিয়ম মেনে যদি খান তাহলে কাজ হবে অনেক ভাল। হরিতকী আপনি চূর্ণ বা গুঁড়ো রূপে, কাথ হিসেবে আবার বড়ি হিসেবেও খেতে পারেন। কিছু জিনিসের সঙ্গে মিশিয়ে হরিতকী খেতে হয় মরসুমের সঙ্গে তাল রেখে। গরমের সময়ে হরিতকী খেলে অল্প গুড় মিশিয়ে খান। আবার বর্ষার সময়ে হরিতকী রক সল্ট আর শরতে চিনির সঙ্গে খেলে ভাল উপকার পাবেন।
শীতের শুরুতে অল্প আদা কুচি আর শীতের মধ্যে অল্প গোলমরিচ দিয়ে হরিতকী খেতে পারেন। আর বসন্তকালে মধু দিয়ে হরিতকী খাওয়া সবচেয়ে উপকারী। আর প্রত্যেকবার হরিতকী খাওয়ার পর খানিক উষ্ণ জল খেতে হবে।
হরতকি খাওয়ার অপকারিতা (Disadvantages of eating hartaki)
হরতকি খাওয়ার মাঝে যেমন অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে তেমনি কিছু অপকারিতাও রয়েছে।
- গর্ভবতী মা এবং সাত বছরের নিচে শিশুদের হরতকি হওয়া উচিত নয়।
- অতিরিক্ত হরতকি খাওয়া উচিত নয়। কারণ এটি পুরুষদের যৌন শক্তি কমাতে পারে এবং শারীরিক অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে।
- ডায়রিয়া রোগীদের জন্য হরতকি খাওয়া উপযোগী নয়।
- হরতকি প্রতিদিন খাওয়া যাবে না। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন খেতে পারেন।
- আপনি যদি হরতকি খান এবং কোন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
শেষকথা
হরতকি একটি ঔষধি গাছ। নানা রোগ সারাতে এটি ব্যবহার করা হয় থাকে। ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই আপনাকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এতক্ষন আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
আরো পড়ুনঃ
আমলকির নানা ভেষজ গুন
ভেষজ মেডিসিন কিনুন ন্যাচারালস এর শপ থেকে