কবুতরের রোগ ও উপসর্গ এবং চিকিৎসা

কবুতরের রোগ ও উপসর্গ এবং চিকিৎসা ঃ কবুতর এক প্রকারের জনপ্রিয় গৃহপালিত পাখি। একে পায়রা, কপোত, পারাবত প্রভৃতি নামেও ডাকা হয়। কবুতরের মাংস খুবই সুস্বাদু। শান্তির পায়রা হিসেবে এর মর্যাদা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।

আগে কবুতরকে সংবাদবাহক, খেলার পাখি হিসেবে ব্যবহার করা হতো। বর্তমানে অনেকে পরিবারের পুষ্টি সরবরাহ, সমৃদ্ধি, শোভাবর্ধনকারী এবং বিকল্প আয়ের উৎস হিসেবে এদের পালন করছে।

কবুতরের চিকিৎসা

কবুতরের সাধারন রোগের ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক সেনসিটিভিটি টেস্ট করে সঠিক এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে। আর ভিটামিনস ও মিনারেলস খাওয়াতে হবে।

কবুতরের রোগ ও উপসর্গ

 

কবুতরের রাণীক্ষেত রোগটি একটি ভাইরাসবাহিত  সংক্রামক রোগ। এই রোগের জন্য দায়ী ভাইরাস কবুতরের শ্বসনতন্ত্র, পরিপাকতন্ত্র ও স্নায়ুতন্ত্রের সাথে সম্পৃক্ত অঙ্গগুলোকে আক্রমণ করে। রাণীক্ষেত রোগ কবুতরের মাধ্যমে অথবা আক্রান্ত কবুতরের যত্ন নেওয়া ব্যক্তির মাধ্যমে ছড়াতে পারে। রাণীক্ষেত রোগ সংক্রমণের ফলে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয় তাই হা করে নিশ্বাস নেয়,যা স্বাভাবিক কবুতর করেনা পরিপাকতন্ত্রে সংক্রমণের ফলে সবুজ রঙের অথবা সাদা চুনের মতো পাতলা মলত্যাগ করে। স্নায়ুতন্ত্রে সংক্রমণের ফলে ঘাড় বেঁকে যায় কিংবা প্যারালাইজড হয়ে যায়। খাবার গ্রহণ কমিয়ে দেয় এবং নিস্তেজ হয়ে শুধু ঝিমায় অথবা কোথাও স্থির হয়ে বসে থাকে।

কবুতরের সব কয়েকটি রোগের মাঝে কবুতরের বসন্ত বা পক্স রোগ অন্যতম। এটি একটি ভাইরাসবাহিত রোগ। মশার কামড়ের মাধ্যমেও এই রোগ হতে পারে। সংক্রমিত খাবার,পানি খাওয়ানোর দ্বারাও কবুতরের বসন্ত রোগ ছড়াতে পারে। লক্ষণ কবুতরের শরীরের পালকহীন বিভিন্ন অংশ যেমনঃ চোখের চারপাশ,মুখের চারপাশ,পা ইত্যাদি জায়গায় ফোস্কা বা গুটি দেখা যায় যা পরবর্তীতে ক্ষত হয়। খাবার গ্রহণে অনীহা দেখা যায়।নড়াচড়া বন্ধ করে দেয় এবং ঝিমাতে থাকে।

কবুতরের সালমোনেলোসিস রোগ একটি ব্যাকটেরিয়াবাহিত সংক্রমণ। এই রোগে আক্রান্ত কবুতরের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে পাশাপাশি এটি মানুষের জন্যও সংক্রামক। সালমোনেলোসিস রোগের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া কবুতরের অন্ত্রে আক্রমণ করে, মারাত্মক ক্ষতি করে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশকে সংক্রমিত করতে পারে। সালমোনেলোসিস রোগ কবুতরের কর্মক্ষমতা হ্রাস করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায় এবং ক্ষুধা হ্রাস করে। এই রোগের জন্য প্রধানত দায়ী হলো  সংক্রমিত খাদ্য, পানীয় জল এবং মল-মূত্র। পা ও পাখনার গোড়া ফুলে যাওয়া, ব্যাথা কিংবা প্যারালাইজড হতে পারে। আক্রান্ত কবুতর অস্বাভাবিকভাবে নড়াচড়া করবে। উড়ার ক্ষেত্রেও অস্বাভাবিকতা দেখা যাবে। অন্ত্রে সমস্যার জন্য  ক্ষুধা কমে যাবে। আক্রান্ত কবুতরের ওজন হ্রাস পাবে, চেহারা নষ্ট হয়ে যাবে জেলির মতো হলুদ বা সবুজ পাতলা মলত্যাগ করবে।

ডায়রিয়া হয়।

মাইকোপ্লাজমোসিস রোগ মূলত শ্বাসনালী তে সংক্রমণ যা বিভিন্ন ধরনের হয়। মাইকোপ্লাজমোসিস হলো ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের সংমিশ্রণে সৃষ্ট রোগ, যা এটিকে বিপজ্জনক করে তোলে। কবুতরের এই রোগের জন্য প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয় সংক্রমিত খাদ্য, পানীয় জল, মল এবং ব্যবহৃত সরঞ্জাম। নাক দিয়ে জেলির ন্যায় তরল বের হয়। নিশ্বাস নিতে সমস্যা হয়। গলায় জ্বালাপোড়া হয়। নড়াচড়া বা উড়তে ইচ্ছে হয়না।অস্বাভাবিক চলাফেরা লক্ষ্য করা যায়।

কবুতরের রক্ত আমাশয় বা কক্কিডিওসিস রোগ হলো একটি পরজীবীবাহিত রোগ। এই রোগটি পরিপাকতন্ত্রকে সংক্রমণ করে, যার ফলে কবুতরের খাবার গ্রহণের প্রবণতা কমে যায়। কবুতরের রক্ত আমাশয় রোগের প্রধান কারণ হিসেবে বলা যায় খাবারের বিষক্রিয়া তাই কবুতরকে সবসময় ভালো মানের খাবার দিতে হবে। সংক্রমিত কবুতরের ত্যাগকৃত মল কিংবা ইনজেকশনের দ্বারা অন্য কবুতরকে সংক্রমণ করে. আক্রান্ত কবুতরের খাবার প্রতি অনীহা লক্ষ্য করা যায়। ওজন হ্রাস পায়,চেহারা ভেঙে যায়। আক্রান্ত কবুতর রক্ত মিশ্রিত পায়খানা করে।

কবুতরের ইনক্লুশন বডি হেপাটাইটিস বা আইবিএইচ রোগ ছোঁয়াচে বা  সংক্রামক রোগ। সাধারণত হেপাটাইটিস রোগে আক্রান্ত কবুতরের বমি এবং পায়খানার সাহায্যে অন্য ভালো কবুতরও সংক্রমিত হতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত কবুতর বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই মারা যায়। হেপাটাইটিস রোগের লক্ষণ দুর্গন্ধযুক্ত সবুজ,বাদামি বা খয়েরী পায়খানা করবে। আক্রান্ত কবুতরের খাবার প্রতি অনীহা কাজ করবে। খাবার গ্রহণ না করায় দুর্বল হয়ে যাবে,শুকিয়ে যাবে। কোথাও স্থির হয়ে বসে থাকবে কিংবা ঝিমোবে। আক্রান্ত কবুতর প্রচুর পরিমানে বমি করবে।

 

কবুতরের কি কি কারণে মারা যায়

একটি বয়সের পর কবুতর সাধারণভাবেই মারা যেতে পারে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে সঠিকভাবে পরিচর্যা না করা হলে কবুতর খুব তাড়াতাড়ি মারা যায়। যেমন ঠান্ডা গরম এমন অবস্থায় অথবা ঠিকমতো তালিকা অনুসারে খাবার না দিলে। 

 

কবুতরের মারা যাওয়ার লক্ষণ

দুর্বলতা, খাদ্য গ্রহণে অনীহা, শুকিয়ে যাওয়া, ডাইরিয়া মলে রক্ত থাকে ককসিডিয়া, পুষ্টিহীনতা ও অবশেষে মৃত্যু ঘটে কবুতরের।

 

কবুতরের থেকে কি কি রোগ হয়

 

যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম অথবা যারা এই শিশুটির মতো ইতিমধ্যেই কোন শারীরিক সমস্যায় দুর্বল তাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

সাধারণত কবুতরের বিষ্ঠা পরিষ্কার করতে গিয়েই সবচাইতে বেশি আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে।

বিষ্ঠা পরিষ্কারের সময় বাতাসে তার যে কণা ভেসে বেড়ায় সেটি নিশ্বাসের সাথে শরীরে প্রবেশ করে।

খাঁচায় খুব বেশি বিষ্ঠা জমতে না দেয়াই ভালো। কবুতরের ঘর পরিষ্কার করার সময় নাকমুখ কিছু দিয়ে ঢেকে নিন।

পাখিকে খাওয়াতে গিয়ে বা আদর করতে গিয়ে বিষ্ঠা গায়ে লেগেও আক্রান্ত হতে পারেন এসব অসুখে।

যদি শরীরের সাথে কবুতর বা অন্য পাখির বিষ্ঠার সংস্পর্শ হয় তবে খুব সাবধানে তা পরিষ্কার করতে হবে।

হাসপাতালে থাকা অবস্থাতেই কবুতরের বিষ্ঠা থেকে ‘ক্রিপটোকক্কাস’ নামক এক ধরনের ছত্রাক সংক্রমণ হয় তার শরীরে। সেটি থেকে দেখা দেয় নতুন অসুখ। কবুতরের বিষ্ঠার সংস্পর্শে আসা মাটিতে এটি পাওয়া যায়। হাসপাতালের যে ঘরে শিশুটিকে রাখা হয়েছিলো সেটির খুব ছোট একটি ছিদ্র থেকে কবুতরের বিষ্ঠা সম্ভবত ঘরে প্রবেশ করেছিলো বলে মনে করা হচ্ছে। প্রদাহ থেকে শিশুটি মারা গেছে। এতে কাশি, বুকে ব্যথা, শ্বাস কষ্ট, জ্বর, মেনিনজাইটিস হতে পারে। এই নির্দিষ্ট প্রদাহটি অবশ্য মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না।

 

কবুতর পালনের উপকারিতা 

প্রথমত কবুতর এর মাংস খেতে অনেক সুস্বাদু। ছোট একটি কবুতর ক্রয় করে অল্প দিনেই বড় করে বাজারজাত করা যায়। কবুতরের বাজার মূল্য অনেক বেশি। অর্থাৎ কবুতর পালন করে লাভবান হওয়া সম্ভব। কবুতরের একটি ছোট পাখি স্বল্প পরিসরে পালন করা যায়। কবুতর সাধারণত খরকুটো জাল মুড়ির গুঁড়ো এসব খেয়ে বাঁচে।কবুতরের খাদ্য উপাদান খুবই সহজলভ্য এবং সস্তা। তাই অল্প কিছু অর্থ নিয়োগ করে কবুতর পালন করে লাভবান হওয়া সম্ভব। কবুতরের মাংস পুষ্টি ভান্ডার হিসেবে কাজ করে এবং এটি শিশুদের, বয়স্কদের এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য অসম্ভব উপকারী একটি খাদ্য। কবুতরের আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ফাইবার ও কিছু পরিমাণ কোলেস্টেরল।কবুতর পালন করেন সাধারণত আমাদের দেশের গ্রামীণ জনসাধারণ। গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে কবুতর পালন করতে দেখা যায়।

 

কবুতর পালনের অপকারিতা

কবুতর পালন এর উপকারিতা থাকার পাশাপাশি অনেক অপকারিতাও রয়েছে। কবুতর পালন একটি ধৈর্যের ব্যাপার।কবুতর পালন করলে কবুতরের মলমূত্রে বাড়ীঘর নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর হয়ে থাকে। কবুতরের গলায় একটি বিষাক্ত উপাদান থাকে।যদি পালন করা কবুতর কোনভাবে ঘরে এসে কোন খাবারে মুখ দেয় , তাহলে ওই খাবার বিষাক্ত হয়ে যায়।ছোট বাচ্চারা হঠাৎ ঐ খাবার খেয়ে ফেললে তাদের পেটে ভয়ংকর অসুখ হতে পারে। নিয়মিত কবুতরের ঘর পরিষ্কার করতে হয়, যা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। এছাড়া কবুতরের ঘরে নানা রকম পোকা মাকড় বাসা বাঁধতে পারে।পোকার আক্রমণ কেবলমাত্র কবুতরের বাসার মধ্যেই থাকে না বরং তা মানব বসতির মধ্যে প্রবেশ করে। ফলে মানুষের জন্য তার একটি অসহনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।

 

কবুতরের বৈশিষ্ট্য

পৃথিবীতে প্রায় ২০০ জাতের কবুতর পাওয়া যায়। বাংলাদেশে প্রায় ৩০ প্রকার কবুতর রয়েছে। বাংলাদেশের সর্বত্র এসকল কবুতর রয়েছে। বাংলাদেশের জলবায়ু এবং বিস্তীর্ণ শস্যক্ষেত্র কবুতর পালনের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। পূর্বে কবুতরকে সংবাদবাহক, খেলার পাখি হিসাবে ব্যবহার করা হতো। 

কিন্তু বর্বারের পুষ্টি সরবরাহ, সমৃদ্ধি, শোভাবর্ধনকারী এবং বিকল্প আয়ের উৎস হিসাবে ব্যবহৃত হচেছ। এদের সুষ্ঠু পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সঠিকভাবে প্রতিপালন করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখা যায়। 

কবুতর প্রতিপালন এখন শুধু শখ ও বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই বরং তা এখন একটি লাভজনক ব্যবসা হিসাবে পরিগণিত হয়েছে। কবুতর বাড়ি ও পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা ছাড়াও অল্প খরচে এবং অল্প ঝামেলায় প্রতিপালন করা যায়। বাংলাদেশে কবুতরের জাতের মধ্যে গিরিবাজ খুবই জনপ্রিয়. গবেষণায় দেখা যায় যে কবুতরের গৃহপালন প্রায় ১০,০০০ বছর আগে শুরু হয়েছিল।

 

কবুতরের প্রিয় খাবার

হাঁস-মুরগির মতো কবুতরের খাবারে শ্বেতসার, চর্বি, আমিষ, খনিজ, ভিটামিন প্রভৃতি থাকা প্রয়োজন। কবুতর তার দেহের প্রয়োজন এবং আকার অনুযায়ী খাবার খায়। প্রতিটি কবুতর দৈনিক প্রায় ৩০-৫০ গ্রাম পর্যন্ত খাবার খেয়ে থাকে। প্রধানত গম, মটর, খেশারী, ভুট্টা, সরিষা, যব, চাল, ধান, কলাই ইত্যাদি শস্যদানা খেয়ে থাকে।

 

 

আরও পড়ুনঃ

খরগোশের রোগ এবং উপসর্গ 

এনিমেল কেয়ার 

Share this post

Facebook
Twitter
LinkedIn
Pinterest
Telegram
Tumblr

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Our Newsletter

Get updates and learn from the best

More To Explore

Popular posts