রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট রাতারগুল বাংলাদেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট (Ratargul Swamp Forest)। রাতারগুল বনটি প্রায় ৩০,৩০০ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। এই বিস্তৃর্ণ এলাকার ৫০৫ একর জায়গায় রয়েছে বন আর বাকি জায়গা ছোট বড় জলাশয়ে পূর্ণ। তবে বর্ষায় সময় পুরো এলাকাটিকেই দেখতে একই রকম মনে হয়।
রাতারগুল ‘সিলেটের সুন্দরবন’ নামে খ্যাত। রাতারগুল জলাবন বছরে ৪ থেকে ৫ মাস পানির নিচে তলিয়ে থাকে। তখন জলে ডুবে থাকা বনের গাছগুলো দেখতে সমগ্র বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকরা এসে ভিড় জমায়। অনেক পর্যটক রাতারগুলকে ‘বাংলাদেশের আমাজন’ হিসাবে অভিহিত করেন।
হাওরের স্বচ্ছ পানির নিচে বনগুলো দৃশ্যমান থাকায় বর্ষাকালে অনেক পর্যটকদের সমাগম দেখা যায়। আবার শীত মৌসুমে ভিন্নরূপ ধারণ করে এ বন। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে জেগে ওঠে মুর্তা ও জালি বেতের বাগান। এর সৌন্দর্য যেন প্রতি রূপ থেকে ভিন্ন।
রাতারগুলের নামকরণ (Naming of Ratargul)
সিলেটের স্থানীয় ভাষায় মুর্তা বা পাটিগাছ “রাতাগাছ” নামে পরিচিত। সেই মুর্তা অথবা রাতা গাছের নামানুসারে এই বনের নাম হয়েছে রাতারগুল।
রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট এর অবস্থান
সিলেট জেলার গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর ইউনিয়নে, গুয়াইন নদীর দক্ষিণে এই বনের অবস্থান। বনের দক্ষিণ দিকে আবার রয়েছে দুটি হাওর: শিমুল বিল হাওর ও নেওয়া বিল হাওর। সিলেট শহর থেকে এর দূরত্ব ২৬ কিলোমিটার। ৫০৫ একর জায়গা জুড়ে এই বনটির অবস্থান।
জলবায়ু
সিলেটের উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত ক্রান্তীয় জলবায়ুর এই বনটিতে প্রতিবছর ভারী বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। বনের সবচাইতে কাছে অবস্থিত সিলেট আবহাওয়া কেন্দ্রের তথ্যমতে এখানে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৪১০০ মিলিমিটার। জুলাই মাসটি সবচাইতে আর্দ্র যখন বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় ১২৫৫ মিলিমিটার, অন্যদিকে বৃষ্টিহীন সবচাইতে শুষ্ক মাসটি হলো ডিসেম্বর।
মে এবং অক্টোবরে গড় তাপমাত্রা গিয়ে দাঁড়ায় ৩০° সেলসিয়াসে, আবার জানুয়ারিতে এই তাপমাত্রা নেমে আসে ১০° সেলসিয়াসে । ডিসেম্বর মাসে এখানকার আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ প্রায় ৭৬ শতাংশ, যা জুলাই-আগষ্টে ৮০ শতাংশেরও বেশি।
রাতারগুলে কায়াকিং
রাতারগুলে আপনি কায়াকিং করার সুযোগ পাবেন। কায়াকে ঘুরে আপনি যে মজা পাবেন সেটার সাথে নৌকায় ঘোরার মজা এক হবে না নিশ্চিত। কায়াক নিয়ে আপনি রাতারগুলের যেখানে সেখানে ঢুকতে পারবেন। ইচ্ছা হলেই থামতে পারবেন। যেটা নৌকা নিয়ে আপনি পারবেন না।
আর রাতারগুলের ভিতরে ঢুকে কিছু সময় চুপচাপ কায়াকে বসে থাকবেন যেখানে গাছের ঘনত্বের কারনে সূর্যের আলো যায় না, চারিদিকে দিনের বেলাতেই ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, স্রোতের কল কল শব্দ, হটাৎ পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ, পানির ভিতরে ঘাটি গেড়ে থাকা বিশাল বিশাল গাছ, ওয়াচ টাওয়ার হতে চারপাশের ভিউ। সর্বোপরি আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য!
জনপ্রতি কায়াক এক ঘন্টা – ১৫০/-
রাতারগুল প্রবেশ ও অন্যান্য ফি সমূহ
প্রবেশ ফিঃ বয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা, ১৩ বছরের নিছে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য ২০ টাকা এবং বিদেশী পর্যটকদের জন্য প্রবেশ ফি ৪০০ টাকা।
পার্কিং ফিঃ মোটরসাইকেল, সি এন জি পার্কিং ফি ২০ টাকা। প্রাইভেট কার, জিপ, মাইক্রোবাস ১০০ টাকা এবং বাস পার্কিং ফি ২০০ টাকা।
গাইড ফিঃ প্রথমবার রাতারগুল ভ্রমনে গেলে গাইড নেওয়া ভালো। ঘন্টাপ্রতি গাইডকে ১০০ টাকা ফি প্রদান করতে হবে।
যেভাবে রাতারগুল যাবেন – কিভাবে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট যাবেন
রাতারগুল যেতে হলে আপনাকে প্রথমে আসতে হবে সিলেটে। সিলেট থেকে যেতে হবে গোয়াইনঘাটে। সিলেট থেকে গোয়াইনঘাটের দূরত্ব ২৬ কিলোমিটার।
বাসে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট
ফকিরাপুল, সায়েদাবাদ বা মহাখালি বাসস্ট্যান্ড থেকে অনেক বাস সিলেটের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েছে গ্রীন লাইন, সৌদিয়া, শ্যামলী ও এনা পরিবহণ। এসব বাসের রয়েছে এসি এবং নন-এসি উভয় সার্ভিস। বাস প্রতি জনপ্রতি টিকেটের মূল্য পড়বে ১৩০০ থেকে ১৪০০। নন এসি বাসের ক্ষেত্রে ৬০০ থেকে ৮০০।
ট্রেনে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট
ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট যাওয়া উত্তম। ট্রেনে সিলেট যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভাড়াটাও কম লাগে। ঢাকা থেকে সিলেটে যাওয়ার ক্ষেত্রে কমলাপুর অথবা বিমানবন্দর থেকে বেঁচে নিতে পারেন উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত অথবা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনকে। ভাড়া পড়বে শোভন চেয়ারের ক্ষেত্রে জনপ্রতি ৩০০টাকা এবং এসি চেয়ারের ক্ষেত্রে ৬২০টাকা। সময় লাগে কোনোটাতে ৬ থেকে ৭ ঘন্টা। টিকেট কেটে নিতে পারেন অনলাইন থেকে সেখানে টাইম দেখে।
সিলেট থেকে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট যাওয়ার উপায়
সিলেট শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে গোয়াইঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নে অবস্থিত রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট। সিলেট শহর থেকে কয়েকটি রাস্তা দিয়ে বনে যাওয়া যায়।
সিলেট আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সিএনজির মাধ্যমে গোয়াইনঘাট যাওয়া যায়। সিএনজি রিজার্ভ নিতে খরচ হবে প্রায় ৪০০-৬০০ টাকা। পরিবার নিয়ে গেলে সিএনজি রিজার্ভ নেওয়াই ভালো তবে ভাড়া পূর্বেই কনফার্ম করে নিবেন। গোয়াইনঘাট পৌছে চৌরঙ্গি ঘাট বা মাঝের ঘাট থেকে নৌকা ভাড়া করে রাতারগুল যেথে হবে। একটি নৌকায় ৪-৫ জন যাওয়া সম্ভব। নৌকা ভাড়া ৭০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকার মত হবে (ভাড়া পরিবর্তনযোগ্য)।
কোথায় থাকবেন
সিলেটে থাকার মত অনেকগুলো হোটেল আছে,সিলেটে আপনি আপনার প্রোয়োজন ও সামর্থ অনুযায়ী যেকোন ধরনের হোটেল পাবেন। কয়েকটি পরিচিত হোটেল হলো- হোটেল হিল টাউন,গুলশান,দরগা গেইট,সুরমা,কায়কোবাদ ইত্যাদি। তবে ঈদের সময় সিট সংকট থাকতে পারে। তাই যাওয়ার ৩/৪ দিন আগে এডভান্স বুকিং দিলে ভালো হয়৷ লালা বাজার এলাকায় কম ভাড়ায় অনেক মানসম্মত রেস্ট হাউস আছে৷ হোটেল অনুরাগ-এ সিঙ্গেল রুম ৩০০টাকা(দুই জন আরামসে থাকতে পারবেন), তিন বেডের রুম ৪০০টাকা(নরমালই ৪জন থাকতে পারবেন।
কোথায় খাবেন
সিলেট জিন্দাবাদ এলাকায় খাবারের জন্য বেশ কিছু ভালো মানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। যেমন-পাঁচ ভাই,পানশি ও পালকি। এদের মধ্যে পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্টের খাবারের মান বেশ ভালো এবং খাবারও তুলনামূলকভাবে সস্তা। অনেক রকম ভর্তা, মাংস, খিচুড়ি বেস্ট মজাদার। এখানে প্রায় ২৫ প্রকারের ভর্তা আছে।
FAQ
রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট ভ্রমনের উপযুক্ত সময়
জুলাই আগস্ট বা সেপ্টেম্বর মাসে রাতারগুল ভ্রমনের আইডিয়াল টাইম ধরা হয় কারন এই সময়ে বর্ষাকাল থাকে তবে শীতকালে ও এক অন্যরকম দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।
ঢাকা থেকে রাতারগুল একদিনে ভ্রমন করে আসা সম্ভব?
হ্যা, ঢাকা থেকে রাতে বাসে বা ট্রেনে যেয়ে সকালে নেমে সিলেটের গোয়াইনঘাট এলাকায় চলে গেলে আবার সন্ধায় ঘুরে চলে আসতে পারবেন
রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট tour guide – রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট tours and travels
আরও পড়ুনঃ
জিন্দা পার্ক ভ্রমন গাইড
ভাসমান পেয়ারা বাজার ভ্রমন
ম্যাজিক প্যারাডাইস ভ্রমন গাইড