এসি বিস্ফোরণ কি কারনে হতে পারে বা কেন হয় ?

এসি বিস্ফোরণ: গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরমে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র এসির মাধ্যমে আমরা প্রশান্তি পেয়ে থাকি। একসময় এই যন্ত্রটিকে বিলাসিতার উপকরণ মনে করা হলেও বিশ্বজুড়ে গরমের তীব্রতা বাড়তে থাকায় এটি এখন প্রয়োজনে পরিণত হয়েছে। তবে এই যন্ত্রটি কখনো কখনো নিরাপত্তা ঝুঁকিও তৈরি করতে পারে। বর্তমান সময়ে নিয়মিতই এসির বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। সতর্কতামূলক কিছু ব্যবস্থা নিলে এরকম দুর্ঘটনা এড়ানো যেতে পারে।

এসি বিস্ফোরণ কেন হয় 

বেশ কয়েকটি কারণে এসি বিস্ফোরিত হয়ে থাকে। প্রাথমিক কারণগুলোর মধ্যে একটি হল রেফ্রিজারেন্ট লিক। বাতাসকে শীতল করার জন্য এসিতে উচ্চ চাপে রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস ব্যবহার করা হয়। যদি রেফ্রিজারেন্টে লিক হয়, তবে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। কিছু কিছু রেফ্রিজারেন্ট স্ফুলিঙ্গের সংস্পর্শে এলে আগুন ধরে যেতে পারে। এর ফলে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করার কারণে এসি বিস্ফোরণ হয়ে থাকে। এসির নিয়মিত যত্ন বা পরিষ্কার না করলে ময়লা জমে বিভিন্ন ত্রুটি দেখা দিতে পারে। যা এসি চলতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এবং সেই কারণে এসি অতিরিক্ত গরম হয়ে এসি বিস্ফোরণের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

এছাড়াও কিছু কিছু এসি দীর্ঘ সময় চালালে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিগুলো অতিরিক্ত গরম হতে পারে, যার ফলে বিস্ফোরণও ঘটতে পারে। ভোল্টেজের ওঠানামার কারণে এসির বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিতে ত্রুটি দেখা দিতে পারে এবং এর ফলে এসির আরো অন্যান্য বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।

 

এসি বিস্ফোরণ রোধে করণীয়

প্রথমে এসির বিস্ফোরণ রোধে এসির সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। এসি নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে এবং কোনো সমস্যা থাকলে তা শনাক্ত করতে পারেন এমন পেশাদার টেকনিশিয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে হবে। এসি বিস্ফোরণ রোধ করার আরেকটি কার্যকরী উপায় হল রেফ্রিজারেন্ট লিক ডিটেক্টর ইনস্টল করা। এই ডিভাইসগুলো রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস ছড়িয়ে পড়লে সতর্ক করতে পারে। অনেক বছরের পুরোনো এসি পাল্টে নতুন মডেলে আপগ্রেড করা যেতে পারে। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে তাতে যেন লিক ডিটেক্টর থাকে।

 

জেনে নিন কত টনের এসিতে কেমন বিদ্যুৎ বিল আসে 

অতিরিক্ত গরম থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই বাধ্য হয়ে ঘরে এসি লাগান। ঘরে এসি লাগালেও চিন্তা বাড়ায় বিদ্যুৎ বিল। টানা এসি চললে স্বাভাবিকভাবেই বিল এবং খরচের পরিমাণও বৃদ্ধি হয়। বিল কিসের অপর নির্ভর করে তা জানার পূর্বে এসি নিয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নেওয়া যাক। বর্তমান সময়ে বাজারে বিভিন্ন সংস্থার বিভিন্ন ধরনের এসি পাওয়া যায়। 

 

এসি কিনার আগে গর কতটা বড় তা মাথায় রাখতে হবে। ঘরের আকার বড় হলে অবশ্যই বড় এসি কেনা উচিত। সেক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিলেও কিছুটা তারতম্য হতে পারে। আজকের প্রতিবেদনে জেনে নিন কত টনের এসিতে কেমন বিদ্যুৎ বিল আসতে পারে। টন- এর হিসেবে ব্যক্তিগত কারণে বা বাড়িতে এসির মাপ হয়ে থাকে।১,১.৫,২ টন এরকম বিভিন্ন মাপের এসি পাওয়া যায়। এই টনের পরিমাণ এসির ঠান্ডা করার পরিমান বোঝায়। এটি লোড বোঝায় না। যত বেশি টনের এসি, তত বেশি ঠান্ডা করার ক্ষমতা। যদি কোন ঘরের আয়তন 1000 ফুট হয় থাকে। তাহলে সাধারণত ১ টনের এসি-তে কাজ চলে যায়। যত বড় ঘর, তত বেশি টনের এসি লাগবে। আবার ছাদের তলার ঘরে উত্তাপ বেশি, তাই সেক্ষেত্রে ১০০০ ঘনফুট ঘরেরও অন্তত ১.৫ টনের এসি লাগতে পারে।

 

1.5 টনের একটি walton ইনভার্টার রেগুলার এসি 22 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় একটানা 50 মিনিট করে প্রতিদিন আট ঘণ্টা চালালে এক মাসে বিদ্যুৎ খরচ হবে 253 দশমিক 41 কিলোওয়াট। যার আনুমানিক বিল আসবে 1,583 টাকার মতো। একই সময় দুই টনের এসির বিদ্যুৎ বিল আসবে প্রায় আড়াই হাজার টাকার মতো। তবে এক টনের একটি এসি একই সময় ধরে চালালে বিদ্যুৎ বিল আসবে প্রায় এক হাজার 300 টাকার কিছু বেশি। বিদ্যুৎ বিলের উপর নির্ভর করে এসির বিদ্যুৎ খরচ ও পরিবর্তিত হতে পারে।

 

এয়ারকন্ডিশন (এসি) বাতাস শরীরের জন্য ভালো না খারাপ? 

এমন কাউকে নিশ্চয়ই খুঁজে পাওয়া যাবে না যে কিনা এয়ারকন্ডিশন এর ঠান্ডা বাতাস পছন্দ করবে না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে প্রত্যেকটি সুবিধারই কোন না কোন অসুবিধা নিশ্চয় থাকে। আর আমরা তো এসি বা ফ্রিজ ব্যবহার করে ঠাণ্ডা তৈরি করি না, জাস্ট তাপকে ঠাণ্ডায় পরিণত করি। আর পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্র অনুসারে ঠান্ডা উৎপন্ন করতে গিয়ে আমরা বিপরীতে গরমও উৎপন্ন করছি। এসি  আপনার রুমের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করে সেটাকে শীতল করছে, কিন্তু এর বিপরীতে উৎপাদিত গরমকে বাইরে ছুড়ছে, ফলে পরিবেশ গরম হচ্ছে, আমরা আমাদের পৃথিবীকে উত্তপ্ত করে তুলছি, ফলে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর মতো ভয়াবহ সমস্যার দিয়ে অগ্রসর হয়ে পরছি।

 

এয়ার কন্ডিশনারগুলি অভ্যন্তরীন কক্ষের বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রীক মানের উল্লেখযোগ্য ভাবে উন্নতি করতে পারে। এবং একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করতে পারে। এর কারণ তারা পরিবেশে উপস্থিত পরাগ, ধুলো এবং অন্যান্য অ্যালার্জেনগুলির কক্ষে প্রবেশ প্রতিরোধে সক্ষম।এয়ার কন্ডিশনার আর্দ্রতা হ্রাস করে জীবাণু এবং ছাচের বুদ্ধি পরীক্ষা করতে পারে।

 

তাহলে ক্ষতিকর কোথায়? 

প্রথমত ক্ষতি হচ্ছে আমরা এসি চালাতে গিয়ে অনেক বেশি পরিমাণে টাকা খরচ করছি। এসি ওয়ালা এবং এসি ব্যতিত বাড়ির বৈদ্যুতিক বিলে আকাশ পাতাল পার্থক্য এসে পড়ে। এসি দুই দিনে যে বিদ্যুৎ খরচ করে, সেটা ব্যবহার করে একটি সাধারন বাড়ি পুরা মাস চলতে সক্ষম।

আরেকটি মারাত্মক ক্ষতিকর হচ্ছে বেশিরভাগ এসি এবং রেফ্রিজারেটরে বর্তমানে ক্লোরোফ্লুরোকার্বন বা সি এসি সি (CSCs) নামক এক কেমিক্যাল ব্যবহৃত হয়। যখন কোন পুরাতন এসি বা রেফ্রিজারেটর নষ্ট হয়ে যায় বা বলতে পারেন যখন এর জীবনকাল শেষ হয়ে যায়, এই ক্যামিকাল বায়ুমন্ডলের মধ্যে পালিয়ে যায় এবং উড়তে উড়তে আন্তর-আকাশে চলে যায়। এটি আন্তর-আকাশে গিয়ে আমাদের পৃথিবীর ওজোন-স্তরের অনেক ক্ষতি সাধন করে। 

ওজোন স্তর আমাদের পৃথিবীর ডিফল্ট সানস্ক্রিন হিসেবে কাজ করে, সূর্য থেকে আশা ক্ষতিকর রশ্মিকে আটকে দেয়, যেটা আমাদের ত্বকে ক্যান্সারের সৃষ্টি করতে পারে। তবে অনেক দেশে বর্তমানে এয়ার কন্ডিশনার এ সিএফসি ব্যবহার করা ব্যান করে দিয়েছে। সিএফসির বদলে এইচসিএফসি (HCFCs) ব্যবহার করা হয়, যেটা ওজন বন্ধুত্বপূর্ণ কেমিক্যাল।

 

এসি কিনার সময় যেসব বিষয় খেয়াল রাখা জরুরী 

এসি কিনার আগে প্রথমে ঠিক করুন স্প্লিট এসি নাকি ইউন্ডো এসি কিনবেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে উইন্ডো এসি কি এবং  স্প্লিট এসি কি? মূলত স্প্লিট এসিতে কম্প্রেসার ঘরের বাইরে থাকে বলে মেশিনের আওয়াজ শোনা যায় না। কিন্তু সমস্যা হলো, স্প্লিট এসির কম্প্রেসার বসানোর জন্য ঘরের দেওয়াল ভাঙতে হয়। দেয়াল ভাঙা নিয়ে যদি আপনার কোনো সমস্যা না থাকে তাহলে নিতে পারেন স্প্লিট এসি।

অন্যদিকে উইন্ড্রো এসি লাগাতে গেলে একটি জানালা বন্ধ হয়ে যায়। একটা জানালা বন্ধ হয়ে যায়, আর এসি বন্ধ থাকলে ঘরে আলো-বাতাস ঢোকার সম্ভবনা কমে যায়। দামের দিক থেকে উইন্ডো এসির দামের তুলনায় স্প্লিট এসির থেকে বেশ খানিকটা কম।

এসি অবশ্যই চেষ্টা করবেন ইনভার্টার কেনার। ইনভার্টার এসিতে বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয় হয়। তাই বর্তমানে ইনভার্টার এসি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাজারে। ইনভার্টার এসির কমপ্রেসার সবসময় প্রয়োজনমতো ক্যাপাসিটিতে কমে, ঘরকে রাখে ঠান্ডা। যেহেতু এই এসির কমপ্রেসার কম ক্যাপাসিটিতেও চলতে পারে, তাই সাধারণ এসি থেকে এই এসিতে বিদ্যুৎ খরচ হয় কম।

 

 কোন ব্র্যান্ডের এসি কিনবেন?

কোন ব্র্যান্ডের এসি কিনবেন সেটা অবশ্য আপনার উপর নির্ভরশীল। অল্প একটু গবেষণা করে নিন আপনার বাজেটের মাঝে কোন ব্র্যান্ডের এসি ভালো হবে। তারপর কিনুন। দেশি কিংবা বিদেশি যেকোনো ব্র্যান্ডই ভালো হতে পারে।

একটা দামি জিনিস তখন কিনবেন তখন যাচাই-বাছাই করে কিনুন। হুজুগে কিনে ফেলবেন না। কোম্পানিগুলোর মার্কেটিং দেখে ভুল জিনিস কিনে ভুলের খাতায় নাম না লিখিয়ে উপরের পয়েন্টগুলো দেখে নিয়ে তারপর কিনুন। এই গরমে থাকুন স্বস্তিতে।

শেষ কথা,

এসি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই সব সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এবং দীর্ঘ সময় ধরে এসি চালানো থেকে বিরত থাকতে হবে। ঘরে কেউ না থাকলে এসি চালানো যাবে না। এসি থেকে কোনো গন্ধ বা শব্দ পাওয়া গেলে তৎক্ষণাৎ তা বন্ধ করে পেশাদার টেকনিশিয়ান দিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে। আরেকটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে জানালা খোলা রেখে দীর্ঘ সময় এসি চালু রাখা যাবে না। কারণ, এটি এসির ওপর চাপ ফেলতে পারে। নিয়মিত একজন বিশ্বস্ত মেকানিক দিয়ে এসির সার্ভিসিং করাতে হবে।  এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য, ধন্যবাদ।

Share this post

Facebook
Twitter
LinkedIn
Pinterest
Telegram
Tumblr

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Our Newsletter

Get updates and learn from the best

More To Explore

Popular posts