বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক বা সংক্ষেপে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক বাংলাদেশের গাজীপুর জেলায় অবস্থিত একটি সাফারি পার্ক। মাওনা ইউনিয়নের রাথুরা মৌজায় এই সাফারি পার্ক অবস্থিত। সদর উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর বাঘের বাজার থেকে পশ্চিম দিকে আড়াই কিলোমিটার দূরে ইন্দবপুর গ্রামের কাছেই পার্কটির অবস্থান। প্রায় চার হাজার একর জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে এই পার্কটি। ছায়া সুনিবিড় প্রাকৃতিক শোভায় ভরা এ পার্কে রয়েছে ভাওয়াল গড়ের ঐতিহ্যবাহী গজারি গাছ, শালবন, আকাশ চুম্বি, আকাশ মনি, কাশঁবন, ছন। এখানে আরও রয়েছে ৮টি বাঘ, ৪টি সিংহ, ৪টি ভাল্লুক, ৪টি জিরাফ, ৩টি জেব্রা ও ১০টি বন্য গরু। এছাড়াও কুমির, সাপ, উটপাখিও আছে।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক এর ইতিহাসঃ
ভাওয়াল গড়ের ছোট ছোট টিলা (চালা) ও নীচু ভূমি (বাইদ) সমৃদ্ধ শালবনে দেখা যেত আমলকি, বহেড়া, হরিতকী, করই, শিমূল, হলদু, পলাশ, চাপালিশ, কুসুম, পিতরাজ, উদাল এবং বিবিধ লতাগুল্মরাজি। এ বনে দেখা যেত মায়া হরিণ, চিতাবাঘ, বন বিড়াল, গন্ধগকুল, শিয়াল, সজারু, অজগর, বানর, হনুমানসহ অসংখ্য প্রজাতির পাখি। শালবনে প্রায় ৬৩ প্রজাতির গাছপালা ও ২২০ প্রজাতির বন্যপ্রাণী দেখা যেত। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগরায়ন, শিল্পায়ন, বন ধ্বংস করে কৃষি জমির বিস্তার, আবাসন, জবরদখল ও ভূমি বিরোধের কারনে শাল বনের অস্তিত্ব দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। বন্যপ্রাণী প্রাকৃতিক পরিবেশ, খাদ্যচক্র ও জীববৈচিত্র্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। মানুষের অস্তিত্বের জন্য বন্যপ্রাণীর ভূমিকা অপরিসীম। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, ইকোট্যুরিজমের উন্নয়ন, পর্যটন শিল্পের বিকাশ, শিক্ষা, গবেষণা ও চিত্তবিনোদনের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত ভাওয়ালগড় এলাকায় ‘‘সাফারী পার্ক’’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক কিভাবে যাবেন ?
ঢাকার গুলিস্তান থেকে প্রভাতি-বনশ্রি বাস মাওনা যায়। এই বাসে করে ভবানীপুর অথবা বাঘের বাজার নামতে হবে।এছাড়াও মহাখালি থেকেও এই বাসে উঠা যাবে।অথবা সায়েদাবাদ থেকে বলাকা, গুলিস্তান থেকে গাজিপুর পরিবহন ও যাত্রাবাড়ি, মালিবাগ, রামপুরা থেকে অনাবিল বা অন্য যে কোন বাসে গাজিপুর চৌরাস্তা নামতে হবে।সেখান থেকে মাওনাগামী তাকওয়া অথবা চ্যাম্পিয়ন বাসে উঠতে হবে এবং ভবানীপুর অথবা বাঘেরবাজার নামতে হবে।এছাড়াও কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে জয়দেবপুর নেমে তাকওয়া বাসে করেও যাওয়া যাবে বাঘের বাজার।সেখানে নেমে সেখান থেকে অটোরিক্সা/সিএনজিতে করে খুব সহজেই সাফারি পার্ক যাওয়া যাবে।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক পার্কে প্রবেশ ফিঃ
সপ্তাহে ছয়দিন সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য পার্কটি খোলা থাকে।
প্রাপ্ত বয়ষ্ক জন প্রতি পার্কে প্রবেশ টিকেট ৫০ টাকা এবং ১৮ বয়সীদের নিচে প্রবেশ ফি ২০ টাকা। শিক্ষা সফরে আসা বা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের প্রবেশ মূল্য ১০ টাকা।প্রতি মঙ্গলবার পার্ক সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে।
গাড়িতে করে কোর সাফারি পার্ক পরিদর্শন প্রাপ্ত বয়ষ্কদের প্রতিজনের টিকিট ফি ১শ’ টাকা। অপ্রাপ্ত বয়ষ্কদের জন্য ৫০ টাকা।
প্যাডেল বোট ভ্রমণ ৩০ মিনিট ২শ’ টাকা।
বাস পার্কিং ২শ’ টাকা। মিনি বাস বা মাইক্রোবাস পার্কিং ২শ’ টাকা। গাড়ি বা জিপ পার্কিং ৬০ টাকা। অটোরিকশা বা সিএনজি পার্কিং ৬০ টাকা।
থাকাঃ
এই পার্কে সকালে গিয়ে বিকেলে ফিরে আসা যায়। তারপরও কেউ চাইলে পার্কে থাকতে পারেন। রাত্রিযাপনের জন্য পার্কে বিশ্রামাগার আছে। থাকতে হলে আগে থেকে বুকিং দিয়ে যেতে হবে। এছাড়া ঢাকার বাইরে থেকে আসলে গাজিপুর চৌরাস্তা এসে যেকোন হোটেলে থাকতে পারেন।
খাওয়াঃ
পার্কের প্রধান ফটকের একটু আগেই কয়েকটি রেস্তোরাঁ আছে সেখানে খাওয়া দাওয়া করা যাবে। পর্যটন স্পট বিধায় সব কিছুর দাম একটু বেশি। এছাড়া বাঘের বাজারে কয়েকটি রেস্তোরাঁ আছে সেখানেও খাবারের ব্যবস্থা আছে।
পার্কের ভিতরে দুটি ফুড কার্ট আছে সেখানে ফাস্ট ফুড আইটেম সহ কোমল পানীয়, চিপস ইত্যাদি পাবেন। এবং সকালে গিয়ে অর্ডার করলে দুপুরের খাবারো পাবেন। তবে ভিতরে দাম অনেক বেশি। তাই কিছু কেনার আগে দাম জিজ্ঞাসা করুন। এছাড়াও পার্কে প্রবেশ মুখের ডান দিকে দুইটি রেস্তোরাঁ আছে। বাঘ পর্যবেক্ষণ রেস্তোরা ও সিংহ পর্যবেক্ষন রেস্তোরা। সেখানেও খাওয়া দাওয়া করতে পারেন পাশাপাশি রেস্তোরাঁ বসেই বাঘ, সিংহ পর্যবেক্ষন করতে পারবেন। সবচেয়ে ভালো হয় শুকনা খাবার ও পানি বাহির থেকে কিনে ভিতরে প্রবেশ করা।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক এ দেখার মত যা যা আছেঃ
সাফারি পার্কে আছে জলহস্তী, বাঘ, সিংহ, হাতি, সাম্বার, মায়া হরিণ, চিত্রা হরিণ, বানর, হনুমান, ভল্লুক, গয়াল, কুমির ও বিচিত্র পাখী। এই পার্ক জুড়ে রয়েছে নানা দর্শনীয় পশু-পাখি ও ভাঙ্কর্য। পার্কের প্রথমে ঢুকেই হাতের ডানে পুরো পার্কের মানচিত্র পাওয়া যাবে। আকাশ থেকে পুরো পার্কের নয়নজুড়ানো দৃশ্য দেখার জন্য আছে কয়েকটি ওয়াচ টাওয়ার। এছাড়াও আছে ঝুলন্ত ব্রিজ ও হাতির উপড়ে চড়ার সুযোগ। তবে পার্কের বেশিরভাগ দর্শনীয় জিনিষগুলো টিকেটের বিনিময়ে দেখতে হবে।
বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক বা গাজীপুর সাফারী পার্কটি ৫টি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে।
১. কোর সাফারি।
২. সাফারি কিংডম।
৩. বায়োডাইভার্সিটি পার্ক।
৪. এক্সটেনসিভ এশিয়ান সাফারি পার্ক।
৫. বঙ্গবন্ধু স্কয়ার।
কোর সাফারি: সাফারি পার্কের মূল আকর্ষণ এই কোর সাফারি। যেখানে জনপ্রতি ১০০ টাকা টিকেটের বিনিময়ে বাসে করে ঘুরে বেড়াবেন জঙ্গলে। আর বাঘ, ভাল্লুক, সিং, হরিন, জিরাফ, জেব্রা সহ বিভিন্ন প্রানি দেখবেন উন্মুক্ত। আপনার গাড়ির কাছে এসে তারা খেলা করছে।
সাফারি কিংডম: এর আওতায় রয়েছে বাকি অন্যন্য আকর্ষনিয় সব কিছু। যেমন-
প্রকৃতি বিক্ষন কেন্দ্র
প্যারট এভিয়ারি
ক্রাউন ফিজেন্ট এভিয়ারি
ম্যাকাউ ল্যান্ড
ছোট পাখিশালা
ফেন্সি ডাক গার্ডেন
কুমির পার্ক
প্রজাপ্রতি বাগান
ইমু/অস্ট্রিচ গার্ডেন
কচ্ছপ ও কাছিম প্রজনন কেন্দ্র
লিজার্ড পার্ক
ভালচার হাউজ
হাতি শালা
মেরিন একুরিয়াম
অর্কিড হাউজ
পেলিকন আইল্যন্ড
ঝুলন্ত ব্রিজ
এগ ওয়ার্ল্ড
ধনেশ এভিয়ারি
প্রাইমেট হাউজ
লেক জোন
বোটিং লেক
লামচিতার ঘর
ক্যঙ্গারু এভিয়ারি
প্রাকৃতিক ইতিহাসের জাদুঘর
শিশু পার্ক
হ্রদে বোটিং ছাড়া বাকি সব গুলো দেখতে ১০ টাকা করে টিকেট লাগে। সবগুলি দেখার প্যাকেজ ১৬০ টাকা দিয়ে কেনা যাবে। যেখানে আলাদা আলাদা সব ঘুরে দেখতে ২৬০ টাকা লাগবে। এছাড়াও কিছু খন্ড খন্ড প্যাকেজ আছে ১০০ টাকা ও ৫০ টাকার।
বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক এ শিক্ষা সফর
শিক্ষা সফর বা পিকনিকের জন্য জন্য উপযুক্ত জায়গা। পার্কের বাহিরে পিকনিক করার জন্য রয়েছে বিশাল খালি জায়গা যেখানে গাড়ি পার্কিং করা যাবে চার্জের বিনিময়ে। এছাড়াও কিছু স্পট আছে যেটা পিকনিকের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। শিক্ষা সফর বা পিকনিকের জন্য কর্তৃপক্ষের সাথে আগে যোগাযোগ করতে হবে।
তাই শহুরে কোলাহলপূর্ণ এবং ব্যাস্ততাময় জীবন থেকে বিরতি নিয়ে একটু মানসিক প্রশান্তির জন্য পরিবারকে নিয়ে এখানে ঘুরে যেতে পারেন।
বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক সপ্তাহে কয়দিন খোলা থাকে?
উত্তরঃ ৬ দিন খোলা থাকে এবং সাপ্তাহিক বন্ধ হচ্ছে মঙ্গলবার
বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক কয়টায় খোলা হয়?
উত্তরঃ মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহে ৬ দিন সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকে
আর ও পড়ুন বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর পার্ক