থানকুনি পাতার উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ

থানকুনি পাতার উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণঃ থানকুনি হচ্ছে পরিচিত এক ভেষজ উদ্ভিদ। এটি খুব সহজেই ক্ষেতের ধারে, পুকুর পাড়ে কিংবা ডোবার পাশে বেড়ে ওঠে, থানকুনি পাতার মাঝে রয়েছে অনেক গুণ। থানকুনি পাতা যেকোন ক্ষত সারাতে, পেট ব্যাথা বা পেটের যেকোনো অসুখ দূর করতে, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে এবং সৌন্দর্যচর্চায় এটি প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। 

থানকুনি পাতার রস মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে। বিশেষ করে এই পাতার বহু ধরনের ভেষজ গুণ রয়েছে। সেগুলি জানা থাকলে, নানা সমস্যায় ব্যবহার করতে পারেন এই পাতা।

থানকুনি পাতার  উপকারিতা  ও বিশেষ গুণ

শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে

আমাদের মাঝে অনেকের থ্রম্বোসিস বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে না। প্রতিদিন থানকুনি পাতার রস খেলে রক্ত পরিষ্কার এবং স্বচ্ছল থাকে। ফলে শরীরের নানান সমস্যা দূর হয় এবং রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়। থানকুনি পাতার রস হাত-পা ফুলে এবং হাত পায়ের ব্যথা থেকেও মুক্তি দেয়। 

পেটের যেকোনো সমস্যা দূর করে

আমাদের প্রায় সময়ই তেল-মশলাযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে পেটের সমস্যা দেখা দেয়। থানকুনি পাতা পেটের রোগ নিরাময়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। থানকুনি পাতা পেট খারাপ বা ডায়রিয়া ,আলসার ও পেটের যে কোনো রোগের সমস্যা থেকে মুক্তি আমাদের সহজেই মুক্তি দিবে।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধ

ডায়াবেটিস রুগীদের ক্ষেত্রে থানকুনি পাতা খুবই উপকারী। এই পাতার রস খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে ডায়াবেটিস সব সময় নিয়ন্ত্রণে থাকে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে

থানকুনি পাতা আপনার শরীরে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে থাকে। প্রায় বেশিরভাগ মানুষই হজমের সমস্যায় ভুগে থাকেন। থানকুনি পাতায় উপস্থিত বেশ কিছু পুষ্টি উপাদান রয়েছে , যেসব হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। থানকুনি পাতার রস শরীরের মধ্যে গিয়ে হজমের সহায়ক অ্যাসিড ক্ষরণের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। তার ফলে হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি ঘটে। 

অনিদ্রার সমস্যা দূর করে

থানকুনি পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান। এতে শরীরের নার্ভাস সিস্টেম শান্ত থাকে এবং মানসিক চাপ কম হয়। এর ফলে ঘুম ভালো হয়।রোজ থানকুনি পাতা খেলে অনিদ্রার মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

ডিটক্সিফিকেশন

থানকুনি পাতার রস শরীরের ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করে। শরীরে টক্সিন থাকলে দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়। আপনি যদি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক চামচ থানকুনি পাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে খান, তাহলে আপনার শরীর হবে টক্সিন মুক্ত।

মস্তিষ্কের বিকাশ

থানকুনি পাতা মস্তিষ্কের বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। থানকুনি পাতায় প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ফলিক অ্যাসিড রয়েছে ,যা মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে।

থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম 

গ্রামাঞ্চলের পরিচিত এক ঔষধি গাছ থানকুনি। প্রায় সারাবছরই এটি পাওয়া যায়। থানকুনি পাতার অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। সুস্থ ও সবল থাকতে নিয়মিত এটি খান। প্রতিদিন ১ গ্লাস দুধে ৫ বা ৬ চা চামচ থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে খেলে, চেহারায় লাবণ্য আসে এবং চেহারা হয় আরো উজ্জ্বল। 

 

আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যায়। সকাল-সকাল খালি পেটে থানকুনি পাতার রস খেলে যেমন উপকার মেলে, তেমনই কাঁচা থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেলেও সমান উপকার পাওয়া যায়। ইচ্ছে হলে খেতে পারেন থানকুনি পাতার পেস্ট অথবা বড়াও।

থানকুনি পাতার কিছু অপকারিতা

আমরা যে জিনিসগুলো থেকে উপকার পাই সেই প্রত্যেক জিনিসগুলোরই বিপরীত দিক রয়েছে। একইভাবে থানকুনি পাতার যেমন উপকারিতা রয়েছে, তেমনি রয়েছে অপকারিতাও। চলুন জেনে নিই থানকুনি পাতার কিছু ক্ষতিকর দিক।

# থানকুনি পাতা পেটের ব্যাথা দূর করতে সাহায্য করে,তবে প্রয়োজনের বেশি খেলে পেটের ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। তাই পরিমাণ মতো খেতে হবে।

# থানকুনি পাতা প্রয়োজনের বেশি খেলে মাথা ঘোরাসহ নানান ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

# যাদের লিভারের সমস্যা রয়েছে , তাদের ক্ষেত্রে থানকুনি পাতা খাওয়া ঠিক হবে না। এতে শারীরিক নানা সমস্যায় পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

# কোন ব্যক্তি যদি শরীরে কোন ধরনের অপারেশন করে থাকে, তাহলে সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে থানকুনি পাতা না খাওয়াই ভালো।

# থানকুনির পাতা থেকে অ্যালার্জি, খোশ-পাচড়ার মতো হতে পারে।

 

শেষ কথা 

এতক্ষণে আমরা বুঝতে পেরেছি যে থানকুনি পাতা কোন সাধারণ পাতা নয়, এটি আমাদের শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের জোগান দেয়। এর পাশাপাশি পেন্টাসাইক্লিক ট্রিটারপেন্স নামের একটি উপাদানের ঘাটতি কমায়। তার ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলি আরও ভালোভাবে কাজ করে, উন্নত হয় আমাদের স্মৃতিশক্তি। 

বয়স্ক মানুষদের জন্যও এটি সমানভাবে কার্যকরী। নিয়মিত থানকুনি পাতার রস খেলে বিভিন্ন রোগের আশঙ্কা কমানো যায়। নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের সুস্থতা বজায় থাকে।

 

আর ও পড়ুনঃ
সজেন পাতা খাওয়ার নিয়ম এবং উপকারিতা 

Share this post

Facebook
Twitter
LinkedIn
Pinterest
Telegram
Tumblr

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Our Newsletter

Get updates and learn from the best

More To Explore

Popular posts