বাসক পাতা কে খাবেন এবং নানা ভেষজ গুন

বাসক পাতা (Bask leaf) বাসকের পাতা আকারে ছোট ছোট হয়ে থাকে। এটি হচ্ছে একধরনের গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ।

বাসক পাতার আদিনিবাস আফ্রিকা ও এশিয়ার উষ্ণ অঞ্চল। এটি ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে বাসক পরিচিত।

 

বাসক পাতার উচ্চতা হচ্ছে ঘরে ১ মিটার থেকে ২ মিটার। তবে গাছের কাণ্ড ও শাখা-প্রশাখা খুব বেশি শক্ত মানের নয়। পাতা আকারে বড় ও ঘন, রঙ সবুজ, গন্ধযুক্ত, দেখতে ভল্লাকার ও অগ্রভাগ সুচালো। শিরা-উপশিরা স্পষ্ট। বাসক পাতার কাছে শাখা প্রশাখার অগ্রভাগে ছোট ছোট ফুল ফোটে থাকে। ফুলের মৌসুম বসন্তকাল। ফুল আকারে ছোট, ছোট স্পাইকের ওপর ফোটে। পাপড়ি রঙে সাদা ও তাতে কয়েকটি বেগুনি দাগ থাকে। ফুল শেষে গাছে ফল ধরে। ফল সুপারির আকৃতির এবং এর ভেতর বীজ থাকে। কয়েকদিন পরপর এর ডাল কেটে দিলে বাসক গাছ বংশবিস্তার করে। বীজ ও ডাল কাটিংয়ের মাধ্যমে বংশবিস্তার করা যায়।

 

বাসক পাতা খাওয়ার নিয়ম (Basak leaf eating rules),

বাসকের পাতায় রয়েছে ভ্যসিসির নামক এক ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান এবং এসেন্সিয়াল নামক এক ধরনের অয়েলও বাসক পাতায় পাওয়া যায়। বাসক পাতার ব্যবহার সাধারণত সর্দি ও কাশি কমাতে ব্যবহার করা হয়। বহুদিনের বুকে জমা কফ তরল করার জন্যও বাসক পাতার রস খাওয়ানোর চল অনেকদিন ধরেই রয়েছে। বাসক পাতায় টাকা প্রাকৃতিক উপাদানগুলি সহজে বুকে জমা থাকা কফ গলিয়ে ফেলে এবং ব্রংকাইটিস এর মত সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। 

 

বাসক পাতা আপনি ২ নিয়মে খেতে পারেন-

 

১) কচি বাসকপাতা কুরি সহ ২৫০ গ্রাম ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। ২ লিটার পানির মধ্যে ৫০ গ্রাম আদা এবং দুই রাকা ২৫০ গ্রাম বাসক পাতা দিয়ে পানি ফোটাতে থাকুন যতক্ষণ না পর্যন্ত এক লিটার পানিতে পরিণত হচ্ছে। তারপর ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে নিন। সকালে এবং সন্ধ্যায় হালকা গরম করে খেতে পারবেন।

 

২) এছাড়া ১০টি বাসক পাতার রস করে মধুর সাথে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে এক সপ্তাহ খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। 

বাসক পাতার উপকারিতা (Benefits of Basak Leaf)

বাসকের পাতায় বার্সিলিন নামের এক ধরনের ক্ষারীয় পদার্থ এবং তেল রয়েছে। বাসকের অনেক ধরনের উপকারিতা রয়েছে।

  • বাসক পাতার সাথে এক থেকে দুই চামচ মধু মিশে শিশুদের খাওয়ালে শিশুদের সর্দি কাশি দ্রুত কমে এবং বুকে জমে থাকা কফ গলে যায়।
  • অনেকের দাঁতে পাইরিয়া বা দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে থাকে। এরকম সমস্যায় যদি ২০ টি বাসক পাতা তেতিয়ে দুই কাপ পানিতে সেদ্ধ করে, সেই পানি দিয়ে কুলি করেন, তাহলে পাইরিয়া বা দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়া থেকে মুক্তি পাবেন। 
  • যাদের হাঁপানি রয়েছে। তারা শুকনো বাসক পাতা দিয়ে বিড়ি বা চুরুটের মত পাকিয়ে, তার সাহায্যে ধূমপান করলে শ্বাসকষ্ট প্রশমিত হয়। 
  • বাসক পাতার মাধ্যমে গায়ের গন্ধ দূর করা যায়। যাদের গায়ে কামের গন্ধ রয়েছে তারা বাসক পাতার রস শরীরে লাগালে দুর্গন্ধ দূর হযবে। 
  • বাসক পাতা তেতিয়ে রস বের করে সেই রস ত্বকে ব্যবহারের মাধ্যমে ত্বক ফর্সা হয়। 

 

বাসক পাতার ঔষধিগুন (Medicinal properties of Basak leaves)

বাসক পাতার ঔষধি গুন রয়েছে অনেক। তবে বাসক পাতার ঔষধি গুণের কথা বলতে গেলেই প্রথমেই বলা যায় পাতাগুলো সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় ঔষধ তৈরি করতে। ওষুধ তৈরি করতে তাজা এবং শুকনো – ২ রকমের বাসক পাতার ব্যবহারই দেখা যায়। বাসকের পাতায় ভ্যাসিসিন নামে একটি প্রাকৃতিক উপাদান থাকে (বাসক পাতার গুনাগুন) এবং জরুরি কিছু এসেনশিয়াল অয়েলও থাকে। 

 

বাসক পাতা সাধারণত সর্দি এবং কাশি কমাতে ব্যবহার করা হয় বেশি। অনেক আগে থেকেই বুকে জমা কফ এবং সর্দি-কাশি দূর করতে বাসক পাতা ব্যবহার হয়ে আসছে।

 

বাসক পাতার অপকারিতা (Basak Leaf Disadvantages)

প্রয়োজনের তুলনায় যদি আপনি বাসক পাতার ব্যবহার বেশি করেন সেক্ষেত্রে আপনার বমি, বমিভাব, পেটের সমস্যা ইত্যাদি আরো অনেক সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। গর্ভবতী মহিলাদের বাসক পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। বাসক পাতায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর শারীরিক সমস্যার কারণ হয়ে থাকে।

 

শেষ কথা

বাংলাদেশের প্রায় সব জেলায় এই বাসক উদ্ভিদ জন্মে থাকে। সাতক্ষীরায় বেশি সংখ্যক বাসক জন্মায়। এ গাছের পাতা এখন ওষুধ কোম্পানি কিনে নিচ্ছে। কারণে এটা থেকে নানান ধরনের ঔষধ তৈরি করা হয়। এ পাতা দিয়ে তৈরি হচ্ছে কাশির সিরাপ। সর্দি, কাশি এবং শ্বাসনালির অসুখ সারাতে এটি বেশ উপকারী। ধন্যবাদ।

 

 

 

 

আরো পড়ুনঃ
আমলকির নানা ভেষজ গুন 
ভেষজ মেডিসিন কিনুন ন্যাচারালস এর শপ থেকে

Share this post

Facebook
Twitter
LinkedIn
Pinterest
Telegram
Tumblr

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Our Newsletter

Get updates and learn from the best

More To Explore

Popular posts