সোনা পাতা (Senna leaf)
সোনা পাতা হচ্ছে বীরুৎ জাতীয় একটি উদ্ভিদ। এই পাতা দেখতে অনেকটা মেহেদি পাতার মতোই। কাঁচা অবস্থায় সবুজ রঙের এবং শুকিয়ে গেলে সোনালী রং ধারণ করে। এই পাতায় খনিজ, লবণ, ক্যালসিয়াম ও ফ্লাবিনয়েড নামে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এটি মূলত রেচক বা জোলাপ হিসেবে কাজ করে থাকে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এই উপকারিতার শেষ নেই।
সোনা পাতা কাঁচা অবস্থায় হলুদ এবং সবুজের সংমিশ্রণে একটি রংয়ের হয় এবং শুকানো উপরে সোনালী রং ধারণ করে। এই পাতায় হালকা বুনো গন্ধ রয়েছে। এই চমৎকার ভেষজ উদ্ভিদ ও এর গুণাবলির জন্য বেশ উপকারী। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, সরাসরি এই পাতা থেকে পাতার গুড়া অধিক উপকার পাওয়া যায়।
সোনা পাতার পুষ্টিগুণ (Nutritional value of gold leaf)
১। সোনা পাতা হচ্ছে অনেক রোগের সহজ সমাধান। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সোনা পাতা বেশ কার্যকরী একটি মাধ্যম। এই পাতা খানিকটা পিচ্ছিল হওয়ায় মানব দেহের বৃহদন্ত্রে পানি ও ইলেকট্রোলাইট শোষণ বাধাপ্রাপ্ত হয়। যার ফলে অন্ত্রের উপাদান গুলোর ভলিউম চাপ বৃদ্ধি করে এবং কোলনের সঞ্চালন উদ্দীপ্ত হয়। যার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়।
২। এই পাতায় রয়েছে এনথ্রানয়েড নামের একটি উপাদান। যা হজম প্রক্রিয়াকে কার্যকর রাখতে সাহায্য করে।
৩। এই পাতা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রোধ করতে সাহায্য করে।
৪। এটি ওজন কমাতে অনেক সাহায্য করে।
৫। এটি রুচি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৬। কৃমিনাশক হিসেবে বেশ ভালো কাজ করে।
৭। এই পাতা হচ্ছে অর্শ রোগের প্রতিরোধক এবং প্রতিষেধক। অর্শ রোগের ক্ষেত্রে এটি খুবই কার্যকরী একটি উপায়।
৮। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। মুখের ব্রণ বা চামড়ায় চুলকানোর মতো সমস্যা দূর করে।
৯। এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
১০। দেহের রক্তকে পরিশুদ্ধ আমার পরিষ্কার রাখে।
See more সজনে পাতার উপকারীতা এবং নানা গুন
সোনা পাতার গুড়া খাওয়ার উপকারিতা (Benefits of consuming gold leaf powder)
- এটি শতভাগ খাঁটি ও নিরাপদ।
- এই পাতা হচ্ছেকোষ্ঠকাঠিন্য রোগের মহৌষধ।
- সোনা পাতা সঠিকভাবে রাখলে প্রায় ৩ থেকে ৪ বছর যাবৎ পর্যন্ত সংরক্ষণ করে খেতে পারবেন।
- এই পাতার গুড়া নিজস্ব তত্বাবধানে সংগৃহীত ও প্যাকেটজাত করা হয়।
সোনা পাতা অধিক প্রয়োজনীয় একটি ভেষজ গুণ। এটি চমৎকার ভেষজ গুণ সম্পন্ন পাতা হলেও অধিকে সেবনে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লক্ষণীয়। তাই অতিরিক্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, অন্যতায় হিতে বিপরীত হতে পারে।
সোনা পাতার ব্যবহারবিধি (Usage rules of gold leaf)
মাধ্যম ১ :
এই পাতা আস্ত এবং গুরাও ব্যবহার করা যায়। যদি এই পাতা গুড়া করে ব্যবহার করতে চান, তাহলে ব্যবহারের চার থেকে পাঁচ ঘন্টা পূর্বে এক চামচ বা দের চামচ এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর খালি পেটে এটি পান করুন।
মাধ্যম ২ :
২ কাপ পানিতে এক চামচ শুকনা পাতা ফুটিয়ে এক কাপ পরিমাণ করে প্রতিদিন খালি পেটে বা খাওয়ার আগে খেতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে গেলে এই পাতার ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া ভালো। অন্যথায় এটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
সোনা পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম (Rules for eating gold leaf powder)
অনেকেই আছে যারা এই পাতা চায়ের সাথে মিশিয়ে থাকে। তবে আপনি চাইলে এই পাতার গুড়া আপনি গরম পানির/জলের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। আপনি গরম জলে এই পাতার গুড়া ৪ থেকে ৫ মিনিট রেখে সেটি খেতে পারবেন। তবে এই পাতার গুড়া আপনি ১ চা চামচ করে সপ্তাহে ২দিন থেকে ৩ দিনের বেশি খাবেন না, অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে শরীরে অনেক ক্ষতি হতে পারে।
সোনা পাতা কতদিন খাওয়া যায় (How long can gold leaf be eaten?)
এই পাতা খাওয়ার খেতে নিয়মকানুন রয়েছে। এটি মাসে সর্বোচ্চ ১০ দিন থেকে ১৩ দিনের বেশি খাওয়া উচিত না। খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই গ্যাপ দিয়ে খাওয়া ভালো। সপ্তাহ হিসাবে প্রতি সপ্তাহে ২ দিন থেকে ৩ দিনের বেশি খাওয়া উচিত নয়। এই পাতা বা পাতার গুড়া খেয়ে ভ্রমণ করতে যাবেন না। এতে অনেক শারীরিক সমস্যা হতে পারে।
সোনা পাতার অপকারিতা (Disadvantages of gold leaf)
এই পাতা প্রাকৃতিক হলেও এর ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু বিধি নিষেধ রয়েছে। এই পাতার গুড়া গর্ভবতী মা ও শিশু জন্মদান কারী মায়ের জন্য নয়। এছাড়াও ছোট বাচ্চাদের জন্যও এটি উপযোগী নয়। এছাড়া যারা দীর্ঘদিন ধরে ডাইরিয়া, আমাশয় রোগে রয়েছেন তাদের এটি দেওয়া যাবে না। এই পাতা ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে।
শেষ কথা
সোনা পাতা অত্যন্ত উপকারী একটি ভেষজ উদ্ভিদ। এতক্ষন আমরা জেনেছি এটি নানান রোগ নিরাময়ের পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্যর মতন নানান সমস্যা দূর করতে সক্ষম। জেনে রাখুন এই পাতা হতে সঠিক উপকার পেতে বাজারের খোলা পাতা ব্যবহার না করে ভরসা রাখুন ন্যাচারাল সোনা পাতার উপরে। যা সরাসরি প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। আশা করছি এই পাতার গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
ধন্যবাদ